তানজিল আমির
মিকাত : স্থান অথবা কালের সীমারেখাকে মিকাত বলা হয়। অর্থাৎ ইহরাম ছাড়া যে স্থান অতিক্রম করা যায় না অথবা যে সময়ের আগে হজের ইহরাম বাঁধা যায় না— সেটাই মিকাত।
স্থানবিষয়ক মিকাত (মিকাতে মাকানি) : বেশ দূর থেকে ইহরাম বেঁধে রওনা হওয়া আল্লাহর পানে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছা-আগ্রহকে আরো মজবুত, আরো পরিপক্ব করে। মিকাত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) সীমানা বেঁধে দিয়েছেন, মদিনাবাসীর জন্য জুল হুলায়ফা, শামবাসীর জন্য জুহফাহ, নাজদবাসীর জন্য কারনুল মানাজিল, ইয়েমেনবাসীর জন্য ইয়ালামলাম— এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসেন হজ ও ওমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্য। আর যারা এ সীমার অভ্যন্তরে বসবাস করবে, তাদের স্বস্থানই তাদের ইহরামের জায়গা। তদ্রূপ মক্কাবাসী মক্কা থেকে। অন্য এক হাদিসে ইরাকবাসীর মিকাত জাতু ইর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইহরাম : ইহরামের মাধ্যমেই মূলত হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হারাম করা। হাজি সাহেবরা হজ অথবা ওমরা অথবা উভয়টি পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করেন তখন তাদের ওপর কিছু হালাল, জায়েজ বস্তু ও কাজ হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়।
ইহরাম বাঁধার সময় : হজ অথবা ওমরার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করলে ইহরাম ছাড়া নির্দিষ্ট সীমারেখা মিকাত পার হওয়া যায় না। মিকাত নিকটবর্তী হলে বিমানে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা হাজি সাহেবদের এ ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেন। সে সময়ই ইহরামের নিয়ত করা উত্তম। ভালো হয় বিমানে ওঠার আগেই ইহরামের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। শুধু নিয়তটা বাকি রাখবেন। যদি কেউ প্রথমে মদিনায় যাওয়ার নিয়ত করে, তাহলে এ সময় ইহরামের নিয়ত করার দরকার নেই। কেননা মদিনা থেকে মক্কায় আসার পথে আরেকটি মিকাত পড়বে, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেই চলবে।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম : বাংলাদেশ থেকে যারা হজ করতে যান, তাদের অধিকাংশই তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের জন্য দুবার ইহরাম বাঁধতে হয়। প্রথমবার শুধু ওমরার নিয়ত করেন মিকাত থেকে। দ্বিতীয়বার ৮ জিলহজ তারিখে মক্কা শরিফে যে জায়গায় আপনি আছেন, সে জায়গা থেকে।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ ১৩ কাজ
১. পুরুষের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ। পায়ে ফিতাযুুক্ত স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে। পায়ের পাতা ঢাকে এমন কোনো জুতা পরা যাবে না। নারীরা স্বাভাবিক কাপড় ও জুতা-মোজা পরবেন। ২. পুরুষরা মাথা ও মুখমণ্ডল ঢাকতে পারবেন না। নারীরা মাথা ঢেকে রাখবেন আর মুখমণ্ডল খোলা রাখবেন। ৩. চুল কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা নিষেধ। ৪. নখ কাটা যাবে না। ৫. ঘ্রাণযুক্ত তেল বা আতর ব্যবহার করা যাবে না। ৬. স্ত্রী মিলন হারাম। ৭. যৌন উত্তেজনামূলক কোনো আচরণ বা কথা বলা নিষেধ। ৮. শিকার করা নিষেধ। ৯. ঝগড়া-বিবাদ করা নিষেধ। ১০. চুল ও দাড়িতে চিরুনি বা আঙুল চালানো যাবে না। ১১. শরীরে সাবান লাগানো নিষেধ। ১২. উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোনো জীবজন্তু মারা নাজায়েজ। ১৩. গুনাহর কাজ করা যাবে না।
লেখক : কন্ট্রিবিউটর, পথ ও পাথেয়