মো. সাইফুল ইসলাম খোকন
বর্ষা মৌসুম পাহাড়ে যখন বৃষ্টির পানি পড়ে তখন বাঁশবাগানে নতুন করে বাঁশের ডেম (নতুন) বাঁশের চারা গজানো শুরু হয়। এসব গজানো নতুন বাঁশের ডেম এক শ্রেনীর লোক আহরণ করে বাজারে সয়লাব করে তুলেছে। সু-স্বাদু খাদ্য হিসেবে মানুষ এখন বিকল্প তরকারী হিসেবে মাছ, মাংসের সাথে রান্না করে মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত করছে। যার ফলে বাঁশ বংশ বিলুপ্তি হওয়ার সহ সরকারের ব্যাপক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চকরিয়া পৌর শহরের বাসিন্দা জহিরুল আলম সাগর জানায়,বাঁশ আমাদের একটি প্রয়োজনীয় ও জীবন ধারনের বিশাল অংশ। বাঁশ দিয়ে ঘর-বাড়ি তৈরী ছাড়াও নানা ধরনের পণ্য তৈরি ও বিক্রি করে শত শত পরিবারের জীবন-জীবিকা করে আসছে। বাঁশ ব্যবহার করে নানা ধরণের চাটাই, টুকরি, ডালা, কুলা, ঝাঁকা, ডরি, পারন, টাইল, উকা, খালুই, ঘেরা,টেংরা,সহ বাড়ি, ঘর ইত্যাদি তৈরি করে আসছেন। সংসারের গতি সচল রাখতে অনেক স্থানে নারীরাই এই কাজের ভার কাঁধে নিয়েছেন।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সায়রা খালীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানায়, বাঁশ সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক। দেশের অধিকাংশ মানুষের দিন শুরু হয় বাঁশ কাটা, ও বাঁশ দিয়ে নানা রকম পণ্য তৈরির কাজে। বাঁশের বিভিন্ন তৈরী কাজ দিয়ে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে এ কাজে যোগ দেওয়ায় প্রতিটি পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। কিন্তু বাঁশ এখন মাছ,মাংসের সাথে রান্নার চুলাই উঠে যাওয়ার কারণে বংশ বিলুপ্তি হওয়ার পথে। এতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বাঁশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্ষা শুরুতে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বাঁশের কচি ডেম (স্থানীয় ভাষায় বাঁশপরুল) সয়লাব করে তুলেছে। সু-স্বাদু খাদ্য হিসেবে চাহিদা থাকার কারণে এসব বাঁশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা করে। এ হিসাবে প্রায় হাজার টাকার বাঁশ ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। বাঁশ কে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করার করনে গ্রামে বাড়িঘর তৈরীসহ নানা কাজে বাঁশের ব্যবহার কমে আসতে শুরু করেছে।
দিন মজুর আহমদ কবির বলেন, আমাদের মত অনেক দিন মজুর অন্যের বাড়িতে বাঁশের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা ছাড়াও বাঁশের তৈরী সরঞ্জাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে শত শত পরিবার। বর্তমানে বাঁশের অকাল দেখা দেয়ায় এলাকায় বাঁশের ব্যবহারও কমে এসেছে।
চকরিয়া মাতামুহুরী বাঁশ সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন জানায়, পাহাড়ে বাঁশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মানুষ বাঁশকে এক প্রকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। এতে করে বাঁশ যথাযথ পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে বাঁশের দাম অন্যান্য সময়ের চাইতে দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সচেতন মহল পাহাড়ে বাঁশকে খাদ্য হিসেবে যাহাতে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।