মস্তিষ্ক হলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের পুরোভাগ, যা মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত এবং দেহের প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। যা স্নায়ুকাণ্ডের অগ্রভাগে অবস্থিত ও করোটির দ্বারা সুরক্ষিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্ফিত যে অংশটিতে প্রাণীদের বুদ্ধি, চিন্তা, স্মৃতি ইত্যাদি স্নায়বিক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।
বলা চলে, জীবনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মস্তিষ্কের গুরুত্ব অপরিসীম। বিজ্ঞানীদের মতে, মস্তিষ্ক ছাড়া প্রাণিজগতের বেঁচে থাকাটা অসম্ভব। তবে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে মস্তিষ্ক ছাড়া জীবিত রাখা সম্ভব তা প্রমাণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি একটি শূকরের মস্তিষ্ক তার মাথা থেকে আলাদা করে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বাইরে রেখে দেন গবেষকরা। আর বিকল্প উপায়ে রক্ত সঞ্চালন চালু রেখে শূকরটিকে জীবিত রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারা। বিস্ময়কর এ ঘটনা ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব খ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
জানা যায়, গবেষকরা শূকরটিকে পরীক্ষাগারে নিয়ে এসে তার মস্তিষ্ক শরীর থেকে আলাদা করার পর পাম্প, হিটার এবং কৃত্রিম রক্তের মাধ্যমে বিকল্পভাবে রক্ত সঞ্চালন চালু রাখেন। এভাবেই প্রায় ৩৬ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালিয়ে যান গবেষকরা। আর দেড় দিন পর সেই মস্তিষ্ক পুনঃস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুনঃস্থাপিত মস্তিষ্কে স্বাভাবিক নিয়মে রক্ত সঞ্চালন চালু করতে সক্ষম হন তারা। প্রতিস্থাপিত মস্তিষ্ক নিয়ে বেঁচে ওঠা শূকরটি আবার তার স্বাভাবিক জীবনও শুরু করে।
ভবিষ্যতে মানুষের পুরো মস্তিষ্ক শরীরের বাইরে এনে পরীক্ষা করার একটি উপায় খুঁজে বের করতেই প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষা চালানো হয় বলে জানান গবেষকরা।
গবেষক দলের নেতা অধ্যাপক নেনাদ সেস্টান বিবিসিকে জানান, তারা অন্তত ১০০টি শূকরের ওপর পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা চালিয়েছেন। গবেষণার এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করেন, যে পাম্প, হিটার এবং কৃত্রিম রক্তের একটি প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতে পারলে মস্তিষ্ক শরীরের বাইরে আনার পরও তার কোষে রক্ত সঞ্চালন করা সম্ভব। এরপর পরই রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া কার্যকর রেখে ওই শূকরটির মস্তিষ্ক শরীরে বাইরে নিয়ে আসা হয়।
অধ্যাপক সেস্টান বলেন, এই প্রক্রিয়া যদি মানুষের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, তাহলে সেটি অনেক স্নায়বিক ব্যাধির নিরাময় পদ্ধতি আবিষ্কারে সাহায্য করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি প্রশ্ন তুলে বলছেন, ওই সময় যদি মানুষের জ্ঞান আসে তাহলে তার সুরক্ষার জন্য কি ব্যবস্থা করা হবে? অথবা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ যদি তার আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে নিতে চায় সেটি বৈধ হবে কি না? অর্থাৎ ল্যাবে যদি মানুষের মস্তিষ্কের কৃত্রিম কোষ তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে মৃত্যুর পরও হয়তো তার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা শেষ হবে না। কিন্তু যেহেতু পৃথিবী এখনই অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত, নতুন ব্যবস্থায় সেটি আরো জটিলতা তৈরি করবে বলেই অনুমান বিজ্ঞানীদের।