শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নুর মতে, আজ সোমবার কেবিনেটের শেষ বৈঠক বসছে। এ জন্য মন খারাপ। তিনি বলেন, পাঁচ বছর এখানে কত বৈঠকে অংশ নিয়েছি। কিন্তু আজকের পর থেকে সরকারের বাকি মেয়াদে আর মন্ত্রীদের বৈঠক হবে না। ফলে আমিও আর এখানে বসব না। কিন্তু ভোটে যদি জিতে যান, আর এই সরকারই যদি পুনরায় ক্ষমতায় আসে তাহলে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটে যদি জিতিও, মন্ত্রীই যে আবার হব তার নিশ্চয়তা কোথায়? মন্ত্রী না হলে তো মন্ত্রিসভায় অংশ নিতে পারব না। আর ভোটে না জিতলে এখানে আসারও প্রশ্ন নেই। মন্ত্রীদের শেষ বৈঠক নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু আরো বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ছোট কেবিনেট হয়েছিল। ফলে সেবার অনেকে বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু এবার পুরো মন্ত্রিসভাই বহাল। এর মধ্যে চারজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী পদ ছাড়লেও তাদের পদত্যাগ গৃহীত হয়নি। এ পরিস্থিতিতে গত ২৬ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়, আজ সোমবার (৩ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে শেষ বৈঠক। এতে সবাই যোগ দেবেন। আজকের বৈঠক নিয়ে এই সরকারের মেয়াদে এটা ২০২তম বৈঠক হবে। মন্ত্রিসভায় সেদিন অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ৩ ডিসেম্বরের পর আর বৈঠক হবে না। তবে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত বর্তমান সরকারই কার্যকর থাকবে।
অনেকেই বলেছেন, আজকের বৈঠক শেষ হওয়ার মুহূর্ত থেকে মন্ত্রীদের বিদায়ের সুর স্পষ্ট হবে। কারণ প্রায় সব মন্ত্রীই নির্বাচন করছেন। সবাই চলে যাবেন নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাতে। আওয়ামী লীগ জোট যদি ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফেরেও সে ক্ষেত্রে এরাই যে আবার মন্ত্রী হবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে বর্তমান মন্ত্রিসভায় বিদায়ের রাগিণী বেজে উঠেছে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। আর মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ ছাড়া ৭ জন উপদেষ্টা রয়েছেন। এর মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গত ৬ নভেম্বর মন্ত্রিসভা থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন সন্ধ্যায় ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পদত্যাগপত্র জমা দেন। ৬ নভেম্বর পদত্যাগপত্র দিলেও তা এখনো গৃহীত না হওয়ায় এই চার মন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকাসহ বিভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গত ১১ মাস ধরে আমি বাংলাদেশের মন্ত্রী। এ সময়ের মধ্যে আমি কতটুকু কাজ করেছি, তা প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতে মন্ত্রী হব কি না, তা প্রধানমন্ত্রীই জানেন। এখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এমনকি মন্ত্রীদের শেষ বৈঠক নিয়েও আমার কোনো অনুভূতি নেই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এনেছেন, দায়িত্ব দিয়েছেন। কাজ করেছি। ব্যস, এটুকুই।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আজ শেষ বৈঠক হবে। এ নিয়ে আমার একটুও মন খারাপ নেই। বরং প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেটি আমি ঠিকঠাক পালন করতে পেরেছি কি না, তার হিসাব কষছি। তিনি আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছিলেন তা পূরণ করতে পেরেছি কি না, এ নিয়ে চিন্তা করছি। ভবিষ্যতে কি ফের মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একান্তই নেত্রী শেখ হাসিনার বিষয়। তিনি যদি মনে করেন, তবেই হব। আর প্রতিবারই যে এক খেলোয়াড় খেলবে, তা তো না। মাঠে নতুন খেলোয়াড় নামবে।
তবে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী মনে করছেন, শেষ সময়ে দায়িত্বভার সঠিকভাবে পালন করতে হবে। এতে করে নতুন সরকারের মেয়াদে তার অবস্থানটি আরো মজবুত হবে। বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার ফাঁকেও চলতি বছর শেষ হওয়া কিংবা আগামী বছর শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পের কাজগুলোর বিশেষ তদারকি করছেন মন্ত্রীরা। এখনো সচিবালয়ে মন্ত্রীরা অফিস করছেন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাৎ এ বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’
ভোটগ্রহণের পর ঘোষিত ফলের গেজেট প্রকাশসহ কিছু কাজ থাকে। এ ছাড়া কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে সেগুলোও মেয়াদের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত ৯০ দিন শেষ হওয়ার আগেই ভোটের তারিখ ঠিক করা হয়েছে ৩০ ডিসেম্বর। সংবিধানে অন্তর্বর্তী বা নির্বাচনকালীন সরকারের সুস্পষ্ট রূপরেখা না থাকলেও এ বিষয়ে কিছু ইঙ্গিত রয়েছে। ৫৬(৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সংসদ ভেঙে যাওয়া এবং সংসদ সদস্যদের অব্যবহিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে কাউকে মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার অব্যবহিত আগে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তারা বহাল থাকবেন।’