দিনদিন অবনতি হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি। যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর পয়েন্টে পানি বাড়ছে হুহু করে। বর্তমানে ফরিদপুরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। মধুমতী নদীর ভাঙনও তীব্র আকার ধারণ করেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। তবে স্থিতিশীল থাকতে পারে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদনদীর অবস্থা সম্পর্কিত প্রতিবেদন বলা হয়, আপার মেঘনা অববাহিকার নদীগুলো ছাড়া দেশের সব প্রধান নদনদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পযন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকার অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর পয়েন্টে পানি বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার এবং কাজীপুর পয়েন্টে ১৫৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। চলতি বছরে পানি বাড়ার হার এটিই সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার এবং কাজীপুর পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে যমুনা নদী পানিও বাড়তে শুরু করে, যা বেশ দ্রুত বাড়ছে। বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, দু-একদিন পানি বাড়তে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছোঁয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত সোমবার মধুমতির ভাঙনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রামের প্রায় ১০টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তাদের অনেকে অন্যের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার খোলা আকাশের নিচে কুঁড়েঘরে বাস করছেন। বাড়ি নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যাওয়ায় টিকরপাড়ার চরে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা বাজার এলাকা ও টগরবন্দের বাজড়া গ্রামটিও ভাঙনের কবলে। প্রতিদিন ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বুড়াইচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দিগনগর স্থায়ী নদীরক্ষা বাঁধের শেষ মাথায় খেয়া ঘাটের স্থায়ী ঘাটলাটিও সম্প্রতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদ এলাহী বলেন, ভাঙনকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম তাই ভাঙন বেড়েছে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্বপ্ননগর আবাসন রক্ষার স্থায়ী বাঁধের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে আগামী শুকনো মৌসুমে স্থায়ী বাঁধের কাজ করা হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ১৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বর্তমানে গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি ৮.৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে পাঁচটি উপজেলার কয়েকটি স্থানে নদী পাড় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেল প্রাথমিক প্রটেকশনের জন্য।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগররে অদূরে অন্ধপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসরহতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থয় রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোর পানি বিশেষ সময় দ্রুত বাড়তে পারে।