মধু মাসে, আমের দেশে...

চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আমের বাগান

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

মধু মাসে, আমের দেশে...

  • পরাগ মাঝি
  • প্রকাশিত ৩ জুন, ২০১৮

আম কার না প্রিয়। ভাবুন তো একবার, সারি সারি আমের বাগানে ঝুলছে রাশি রাশি পাকা আম। যতদূর চোখ যায়, শুধু আম আর আম। হাত বাড়ালেই, চোখ ফেরালেই আম। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে আমের দেশ বলা হলে ভুল কিছু হবে না। কেমন হবে, যদি আমের রাজ্য থেকে ঘুরে আসা যায়, তাও আবার এই মধু মাসেই।

আভিধানিকভাবে চৈত্রমাসকে মধুমাস বলা হয়। কিন্তু তা কেবল অভিধানেই সীমাবদ্ধ। মধুমাস বলতে বাঙালি এখন জ্যৈষ্ঠমাসকেই বোঝে। এর নেপথ্যে আসলে এই বিশেষ মাসটিতে বেশ কয়েকটি ফল- আম, কাঁঠাল আর লিচুর বিপুল সমারোহ।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর, সাতক্ষীরা, নাটোর- এই অঞ্চলগুলোতে এখন আমের মহৌৎসব চলছে। ল্যাংড়া, হাঁড়ি ভাঙা, ফজলি, গোপালভোগ, খিরসা, অরুণা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নীলাম্বরী, কালীভোগ, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, গোপাল খাস, সূর্যপূরী, ত্রিফলা, ছাতাপরা, আদাইরা, কলাবতী যে আমই চান না কেন দেশের উত্তরাঞ্চলের বিশেষ কয়েকটি অঞ্চল এসব আমের উৎসস্থল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ আম বিদেশে রফতানি করা হয় এই অঞ্চল থেকে। বিষমুক্ত নির্ভেজাল আম খেতে চাইলে মৌসুম থাকতে থাকতে দল বেঁধে ঘুরে আসা যায় এই অঞ্চল থেকে। কোনো বাগান মালিককে রাজি করাতে পারলে গাছ থেকেই পেড়ে খাওয়া যাবে আম। শুধু কি খাওয়া, সঙ্গে করে নিয়েও আসা যাবে যত খুশি। অনেকেই ভরা মৌসুমে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন আমের হাট কিংবা বাগান থেকেই তরতাজা আম সংগ্রহ করেন। নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও বিলি করেন।

রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী কয়েকটি বাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমের মৌসুম এলে এ লাইনে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। ঢাকা কিংবা দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রীরা এসে ভিড় করে।

-------------------

শুধু আম নয়, আমের রাজ্যে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। ঐতিহাসিকভাবেই রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের গুরুত্ব রয়েছে। এই অঞ্চলের বুক চিরেই বঙ্গোপসাগরের দিকে ধাবিত হয়েছে প্রমত্ত পদ্মা। ভৌগোলিক অবস্থানও এই অঞ্চলের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। বিশেষ এই অঞ্চলটি বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি কিছুটা হিমালয় পর্বত দ্বারা প্রভাবিত। হিমালয় এ জনপদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগর থেকে বাষ্পরাশি মেঘ আকারে বরেন্দ্রভূমির ওপর দিয়ে হিমালয় পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। আর এসব বৈশিষ্ট্যই সেখানে উন্নত প্রজাতির আম উৎপাদনে সহায়তা করে।

এদেশের সব এলাকাতেই আমগাছ থাকলেও আমকে নিজেদের জীবন-জীবিকার অংশ করে নিয়েছে উত্তরাঞ্চলের নির্দিষ্ট কয়েকটি জেলা। প্রতিবছরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের হাটটি বসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে। আম পর্যটকদের জন্য এই হাট ঘুরে দেখা এক বিরল অভিজ্ঞতা। খুব সস্তায় এখানে আম পাওয়া যায়। বিশাল এলাকা নিয়ে আমের বাগানও এই এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি। ভরা মৌসুমে আম পর্যটক এবং আমের বেপারিদের ভিড়ে এলাকাটি সরগরম থাকে। অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয় অনেক হোটেল-মোটেলও। ভ্রমণপিপাসুরা চাইলে ওইসব হোটেলে অবস্থানও করতে পারেন। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী শহরেও অবস্থান করার ভালো হোটেল পাওয়া যায়। আম খাওয়া এবং সংগ্রহের ফাঁকে ফাঁকে দেখে নেওয়া যেতে পারে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পদ্মা নদীর পাড়। চেখে দেখতে পারেন অঞ্চলটির ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব কিছু খাবার। এসব খাবারের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলাই রুটি, শিবগঞ্জের চমচম ছাড়াও রাজশাহীর মুরগি নারিকেলের নাড়ু ও কদু কইতরের স্বাদ নিতে পারেন। এ অঞ্চলের মানুষের কথাবার্তা এবং আচার ব্যবহারেও বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। ভাওয়াইয়া, গম্ভীরা এবং আলকাপ তাদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আছে সাঁওতাল আদিবাসীদের বাস। আমকে কেন্দ্র করে যদি আমের রাজ্যটিকে ভালো করে দেখতে চান, তবে এখনই ব্যাগ গোছানোর প্রকৃত সময়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads