হাবিবুর রহমান, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
রসালো কাঁঠালের জনপদ লালমাটির মধুপুর গড়। এই অঞ্চলটি জামালপুর জেলার পূর্ব-উত্তর থেকে শুরু করে ঢাকা বিভাগের গাজীপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। মধুপুর, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, ঘাটাইল, সখীপুর, সাগরদীঘিসহ উঁচু অংশের লালমাটিতে বিশেষ করে কাঁঠাল ও আনারসের ফলন ভালো হয়। কাঁঠালের জনপদখ্যাত মধুপুর গড় এলাকায় এখন কাঁঠাল পুরোদমে পাকতে শুরু করেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, হাটবাজারে কাঁঠাল আর কাঁঠালে ভরপুর। ভ্যান, রিকশা, অটোবাইক, ঘোড়ার গাড়ি করে কাঁঠাল আসছে বাজারে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার এসে মধুপুর থেকে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কাঁঠাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন মধুপুর এলাকা থেকে ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে মধুপুরের কাঁঠাল। জলছত্র, মধুপুর, সাগরদীঘি, গারোবাজার, রসুলপুর, মোটের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বসছে কাঁঠালের হাট। সরেজমিনে পঁচিশমাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে সাজানো হচ্ছে কাঁঠাল। ক্রেতা-বিক্রেতারা কাঁঠাল কেনা-বেচায় ব্যস্ত। কাঁঠাল বিক্রেতা কৃষক সুরুজ আলী জানান, তার বাগান থেকে অটোবাইক ও ভ্যান দিয়ে ১০০টি বড় কাঁঠাল বাজারে এনেছেন। পাইকাররা ১০০ কাঁঠালের দাম ২৫০০ টাকার বেশি বলছেন না, তাই তিনি বেশ হতাশ। তার মতে, ভ্যান ভাড়া ও শ্রমিক মজুরি দিয়ে তার থাকবে ১৮০০ টাকা। কাঁঠাল কিনতে আসা বেপারি সিরাজ উদ্দিন জানান, পঁচিশমাইল বাজার থেকে প্রতিদিন কাঁঠাল কিনে কুমিল্লা, নোয়াখালী, নেত্রকোনা ও বাদশাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। বেপারি আবদুল হাকিম জানান, এবার দাম মন্দার কারণে ভালো ব্যবসা হচ্ছে না।
মধুপুর গড় এলাকার পিরোজপুর, চাপাইদ, কুড়াগাছা, ভবানিটেকি, পীরগাছা, মমিনপুর, আঙ্গারিয়া, ধরাতি, চাঁনপুর, ফুলবাগচালা, ব্যাঙ্গে বাজার, বাঘাডোবা, শিরিসটাল, শোলাকুড়ী, পীরগাছা, হরিণধরা, বেদুরিয়া, কাকড়াগুনি, জয়নাগাছা, অরণখোলা, নয়নপুর, জারিচিরা, কাটাজানি, বিনাকুড়ি, জলছত্র, মাগন্তিনগর, গোবুদিয়া, জাঙ্গালিয়া, বোকারবাইদ, গারোবাজার, গায়রা, টেলকি, রসুলপুর, রাজাবাড়ী, গেৎচুয়া, লাইনপাড়া, আলোকদিয়া, চাপড়ী, জয়নাতলী, সন্ধানপুর, রসুলপুর, সাগরদিঘিসহ বিভিন্ন গ্রাম অন্যান্য এলাকা থেকে উঁচু থাকার কারণে সহজে পানি উঠতে পারে না বলে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। এসব এলাকার পাহাড়িয়া অংশে প্রায় প্রত্যেক গৃহস্থেরই কম-বেশি কাঁঠাল গাছ আছে। সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বালানি চাহিদা এবং ইটভাটায় লাকড়ি ব্যবহারের কারণে কাঁঠালের গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। পিরোজপুর গ্রামের আবদুল্লাহ ফকির ও আজিজুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঁঠালের দাম কম এবং নতুন বাড়িঘর করার কারণে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। জমিজমা বণ্টন, দাম কম, আধুনিক চাষাবাদসহ নানা কারণে তাদের কাঁঠালের বাগানের পরিধি আগের মতো নেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুরে এ বছর ১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪৬৪ টন।