হাবিবুর রহমান, মধুপুর, ধনবাড়ী ও ঘাটাইল উপজেলা
মাটিতে গোবর-ছাই মেশানো মাটির ঢিবি তৈরি করা। মাটি ভেঙে ঝুরঝুরে করা। পলিব্যাগে গোবর সার মেশানো মাটি ভরা। ভিটি তৈরি করা। ভিটিতে পলিব্যাগ নিপুণ হাতের স্পর্শে সারিবদ্ধভাবে সাজানো। গাছের বিভিন্ন প্রজাতির বীজ পলিব্যাগে লাগানো। গাছ তোলা। রোপণ করা। বিক্রির কাজে ব্যস্ত সময় পার করা- এসবই হচ্ছে পিরোজপুরের নার্সারির মালিক শ্রমিকদের নিত্যদিনের কাজ।
সরেজমিনে মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে গেলে জানা যায় নার্সারির গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পাওয়া নানা কাহিনী। প্রায় দেড় যুগ আগে এই গ্রামের আবু হানিফ স্থানীয় গোবুদিয়া গ্রামে কাজ করতে যান। কয়েক বছর ওই গ্রামের আবুল হোসেনের নার্সারিতে কীভাবে কাজ করেন তা দেখতেন। দেখতে দেখতে হানিফের শখ জাগে নার্সারি করার। পরের বছর ৩ শতাংশ জমির ওপর নার্সারি করেন। নানা জাতের ফলের গাছ ভালো হয়। গাছের চারা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন। পরের বছর তার চাচা আবদুল হামিদের ২০ শতাংশ জমি ৪ হাজার টাকা দিয়ে ৩ বছরের জন্য চুক্তি নেন। এই জমিতে সে গাছের জাত সংখ্যা বাড়ান। কাকডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেন। চারা বড় হলে শুরু হয় বিক্রির ধুম। এলাকায় আর কোনো নার্সারি না থাকায় স্থানীয় জনগণ সব চারা কিনে নেয়। এভাবে কয়েক বছরে বেড়ে যায় নার্সারির পরিধি। কাজের জন্য নিয়োগ করেন শ্রমিক। নার্সারিতে হানিফের সাফল্য দেখে একই গ্রামের নজরুল ইসলাম ও আবদুল জলিল নামের দুই যুবক শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। সাফল্য আসে তাদেরও। এভাবে কয়েক বছরের ব্যবধানে জলিলের চাচা আবদুল খালেক, একই গ্রামের তালেফ আলী, আয়নাল হক, বাবুল হোসেন, তোতা মিয়া, আয়নাল হক, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, কুরবান আলী ও বনু মিয়াসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫টি নার্সারি গড়ে উঠেছে। নার্সারি সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবু হানিফ ও আনসার আলী দুজনে মিলে সব নার্সারি মালিকদের নিয়ে গড়ে তোলেন নার্সারি উন্নয়ন সংস্থা নামে সমিতি। নার্সারি উন্নয়ন সংস্থার বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫৪ জন।
জানা গেছে, নার্সারি গ্রাম হিসেবে এ গ্রামের পরিচিতি পাওয়ার পেছনে আবু হানিফের অবদান বেশি। আবু হানিফের বর্তমানে তার নার্সারির পরিমাণ ৮-১০ বিঘার মতো। বর্ষাকাল এলে এ গ্রাম থেকে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় গাছের চারার সমাগম ঘটে থাকে। নার্সারি উদ্যোক্তা আবু হানিফ জানান, এক সময় এই গ্রামের অনেক যুবক বেকার ছিল। তারা বর্তমানে নার্সারি করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আরো যারা বেকার আছে তাদের কেউ এ ব্যবসায় আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ব্যবসা করে সবাই সুখী হোক ও বেকারত্ব দূর করে পরিবেশবান্ধব কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, পিরোজপুর একটি আদর্শ গ্রাম। এ গ্রামের অনেকগুলো নার্সারি চারা উৎপাদন করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাশাপাশি নার্সারি মালিকদেরও আর্থ-সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে।