প্রকল্প পরিচালক অফিসের খামখেয়ালি, প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদের ২২ মাস অতিবাহিত হলেও কাজের ডিজাইন সরবরাহ না করা এবং ঠিকাদারের প্রাপ্য বিল ঠিকমত পরিশোধ না করায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ভোলা জেলায় ৪২টি মাল্টিপারপাস স্কুল ও ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হচ্ছে না।
ভোলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র মাল্টিপারপাস ডিজেষ্টার সাইক্লোন শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি) এর প্রকল্প পরিচালক দফতর থেকে তমা কনষ্ট্রাকশন এন্ড কোম্পানীকে দুইশত ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সনের ৭ মার্চ ভোলা জেলার ৭টি উপজেলায় ৪২টি মাল্টিপারপাস স্কুল ও ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান কাজ এর কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২৪ মাস সময় নির্ধারিত প্রকল্পের মেয়াদ আসছে ৬ মার্চ শেষ হওয়ার কথা।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আগামী এক মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। এব্যাপারে প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, ২৪ মাসের প্রকল্পের ২৩ মাস অতিবাহীত হয়েছে অথচ এখন পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক অফিস থেকে স্যানিটারী কাজের, বৈদ্যুতিক কাজের এবং আরসিসি কানেক্টিং রোড নির্মাণ কাজের অনুমোদিত ডিজাইন সরবরাহ করা হয়নি। কোন ডিজাইন সরবরাহের পর সে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির পর আবার ডিজাইন পাল্টায়। যেমন চর আইচা নন জিপিএস এর কানেক্টিং রোডের সাথে পুকুরে গাইড ওয়াল নির্মান কাজ পিডি অফিস এর সরবরাহকৃত ডিজাইন অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়। উক্ত কাজ সম্পন্ন করার পর নতুন করে আবার ডিজাইন পাঠায় ফলে সম্পাদিত কাজের পুরো বিল পাওয়া যাচ্ছেনা। এরকম বহু ঘটনা রয়েছে। ৪২ টি স্কুলের কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট গভীরতায় সাইট উন্নয়ন করে স্কুল কাম ঘর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান কাজ করা হয়। ২৩ মাস অতিবাহীত হলেও ঠিকাদররের সাইট ডেভেলপমেন্ট কাজের বিল তো দূরের কথা কি পরিমান বা কতটুকু সাইট উচ্চতা করা হয়েছে তা ও নিস্পত্তি হয়নি। এটা নিয়ে ঝামেলা ইচ্ছে করেই রেখে দেয়া হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সংশ্লিদের মতে প্রকল্পের কনসাল্টটেন্টদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং কারো কারো অদক্ষতার কারনে এরকম হচ্ছে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আরো জানান, ঝামেলাহীন সম্পাদিত কাজের বিল সাবমিট করা হলেও সেই বিল ও কেটে দেয়া হয় । তিনি উল্লেখ করেন, ১৪ তম বিলে মনপুরার সাকুচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের ছাদ নির্মানের পর বিল দাখিল করা হয় কিন্তু প্রকল্প পরিচালক দফতর থেকে শুধু রডের বিল দিয়ে অন্যগুলো কেটে দেয়া হয়। তার মতে এসমস্ত কারনে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছেনা। ভোলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে কাজের ভৌত অগ্রগতি ৮২ পার্সেন্ট আর ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬৬ পার্সেন্ট। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম নামে প্রজেক্টের একজন ফিল্ড রেসিডেন্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ার আছেন তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার পর কিছু কাজের ডিজাইন পাল্টানো হয়েছে। এরকম ঘটনায় তিনি সম্পাদিত কাজের বিলের ব্যাপারে কোন ভুমিকা না নিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।
ভোলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন এ ব্যাপারে জানান, কাজের বিল প্রদান করা হয় ঢাকা পিডি আফিস থেকে। কাজ বাস্তবায়নে কোন সমস্যা থাকলে ঠিকাদার প্রতিনিধির সাথে কথা বলে সমাধান করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জাবেদ করিম জানান, কাজের সকল ডিজাইন সরবরাহ করা হয়েছে হয়ত কোথাও সমন্বয় হীনতা হয়েছে,বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সম্পাদিত কাজের বিল পরিশোধ না হওয়ার বিষয়ে তিনি অবহিত হয়েছেন সামনে থেকে আর এরকম হবেনা বলে তিনি জানান।