মুক্তমত

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবতে হবে

  • প্রকাশিত ৪ জানুয়ারি, ২০২১

হাসিব রনি

 

 

 

বিশ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর করোনার প্রভাবটা সবচেয়ে বেশিই। নাটকের সমস্ত নাটকীয়তা তাদের ঘিরে। অটোপাস নামক ট্যাগে তাদের বিভিন্নভাবে ট্রল করা হচ্ছে। আমি জানি না, এটা শুনে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে নাকি মানসিকভাবে বার বার আঘাত পাচ্ছে।

পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে, শেষ দৃশ্য ছিল অটোপাস। তারপর ভেবেছিলাম, যাক পরীক্ষা নিয়ে তো আর নাটক হবে না। এরপর শুরু হলো আরেক নাটকের অবতারণা, নাটকের নাম গুচ্ছ না আলাদা খেলা শুরু হয়ে গেল। দর্শক তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। একদল বলে গুচ্ছ, আরেক দল বলে আলাদা, কেউ বলেন গায়েবি পরীক্ষা নেব, কেউ বলেন উপস্থিতিতে পরীক্ষা নেব। এ সময় মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কথা খুব মনে পড়ছিল, পুশব্যাক আর  পুশইনের কথা।

১৯৭৩ সালের যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় তার প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা আইন তৈরি হয়, সে কারণে একটির সাথে অন্যটির কোনো মিল নেই। বঙ্গবন্ধু চারটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসিত করে দিলেন। তাদের আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই সব শিক্ষককে জাতির বিবেক হিসেবে ঘোষণা দিলেন। আজ দেশে প্রায় পঞ্চাশের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখন জাতির বিবেক পাড়ায়, মহল্লায়, ঘরে ঘরে দেখা যায়। উনাদের অনেকেই আবার বিজয় দিবসকে স্বাধীনতা দিবস বলে প্রচার করেন, কেউ আবার জুতো পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন, কেউ আবার ফুলের ডালায় শ্রদ্ধাঞ্জলিকে শ্রদ্ধাঞ্জলী লেখেন, কেউ কেউ বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের পতাকা বিকৃতি করেন, তারা যে স্বায়ত্তশাসিত তা সবক্ষেত্রেই প্রমাণ করেন!

সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার, দুদিন পরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অপসারণের আন্দোলন হয়। কারণ হিসেবে জানা যায় সীমাহীন দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি। লজ্জা আপনাদের নেই; কিন্তু আমাদের আছে। আমরা আপনাদের কাছে পড়েছি।

আপনারা নাটক করুন, সিরিয়াল করুন, সিনেমা করুন, যাত্রা করুন, কারো কোনো মাথাব্যথা নেই; কিন্তু শিক্ষার্থী নিয়ে নাটক বন্ধ করুন। একটি সরল প্রশ্ন রেখে গেলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কাদের জন্য?

দেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার স্থায়ী কোনো পথ খুঁজে পেল না? প্রতি বছরই কেন পরিবর্তন করতে হবে? প্রতি বছর পরীক্ষার জন্য আপনারা একটা করে নিয়ম প্রসব করেন, আর  শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে, রাস্তা অবরোধ করে, পড়া বাদ দিয়ে স্লোগান দেয়। কাদের জন্য নিয়ম বানান, আপনাদের জন্য না শিক্ষার্থীদের জন্য? শিক্ষার্থীদের জন্য বানালে তো তারা রাস্তায় দাঁড়াত না। দেখুন, এই করোনার সময়ও আপনারা সময়মতো বেতন তোলেন, আপনারা দিব্যি ভালো আছেন, বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখেই আছেন, শীত নিদ্রায় দুপুরকে ভোর বানাচ্ছেন। কিন্তু যারা শিক্ষার্থী, তাদের অবস্থা জানেন?  স্কুল-কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ভালো পড়ান না, তাদের বিভিন্ন কোচিং বা প্রাইভেটের সাহায্য নিতে হয়। বিশেষ করে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা খুব কষ্টে হয়তো অল্প টাকায় একটা কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে অ্যাডমিশনের পড়া পড়ে আর ধনীর দুলালদের প্রতি বিষয়ে প্রাইভেট শিক্ষক থাকে। আর হুট করে বলে দেবেন, এ বিষয়ে পরীক্ষা হবে না ও বিষয়ে হবে। সাবজেক্ট বাড়াবেন-কমাবেন,  সেটা তো স্থায়ী হওয়া লাগবে। কিন্তু প্রতি বছর পরিবর্তন কেন? আর এ ভোগান্তি অ্যাডমিশন পরীক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একটা আবেগের নাম, একটা গৌরবের নাম, একটা ঐতিহ্যের নাম, কিছু মানুষের সামষ্টিক স্বপ্নের নাম, বাবা-মায়ের লালিত, লুকাইত অহংবোধের নাম। হুটহাট সিদ্ধান্ত নেবেন না, বড় কোনো শিক্ষার্থীর দল বঞ্চিত হলো কি না খেয়াল করুন। বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ তুলে দেওয়াতে কত হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো সেই খোঁজটা রাখুন। আপনি বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ নাও রাখতে পারেন, কিন্তু সেটা তো এক বছর আগেই ঘোষণা দিন, যাতে মাঝপথে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আগের নিয়ম তো আপনারাই করেছিলেন, তাহলে সেই নিয়মের জন্য যারা এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের দায় আপনারা নেবেন না?  সেইসব মহান শিক্ষককে স্মরণ করছি, যারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকেন, যারা এই অসুস্থ সময়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। প্রিয় স্যার, আপনারা জোহা স্যারের উত্তরসূরি, আপনাদের সেভাবেই দেখতে ভালো লাগে, আপনারা এগিয়ে আসুন।

 

লেখক : অ্যালামনাস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads