একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে মহাজোট। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয় পেয়েছে ১৫৩টি আসনে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জয় পেয়েছে মাত্র দু্টি আসনে।
রোববার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটে প্রাণহানি, মাঝপথে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোট বর্জন, হামলা, এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়াসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট শেষ হয় বিকাল ৪টায়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একেএম নুরুল হুদা বলেছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলটির বিপুল বিজয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে কোনো বিজয় মিছিল না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৫টায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করা সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে- জনগণ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। যে হারে সহিংসতার আশঙ্কা ছিল তা হয়নি। নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটারদের অংশগ্রহণ এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘জাতির সঙ্গে নিষ্ঠুর প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল আলমগীর।
সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় সব আসন থেকে একই রকম ভোট ডাকাতির খবর এসেছিল। এ পর্যন্ত আমাদের শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।’
সারা দেশের ভোটগ্রহণ চিত্র : সারা দেশে গতকাল রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট হয়। এতে ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ ভোটার ৪০ হাজার ১৮৩টি নির্বাচনী কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৩০০ আসনের মধ্যে একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। স্থগিত হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হবে ২৭ জানুয়ারি। যদিও নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই-এক স্থানে ‘বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ ছাড়া সারা দেশে সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ভোট শুরুর পর থেকে এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুইবার জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোট। অন্যদিকে এক দশক পর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ভোটারদের রায়ে আগামী ৫ বছর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীর মহাজোট। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন সংযোজন ছিল ইভিএম। ঢাকাসহ সারা দেশের ৬ আসনের ভোটার ভোট দিয়েছেন ইভিএমে। ভোটের এই প্রক্রিয়া নিয়ে ভোটাররা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি নেতিবাচক কথাও বলেছেন। ৬ আসনের প্রার্থীরা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগও দিয়েছেন। এ ৬ আসন হচ্ছে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২ ও চট্টগ্রাম-৯।
এ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। উচ্চ আদালতের আদেশের পর বেশ কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলের পর প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৬১ জনে। এর মধ্যে ১২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, বাকিরা দল মনোনীত।
দেশে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রতীক থাকলেও এ নির্বাচনে জোটের মেরুকরণে অর্ধেক সংখ্যক দলই দুই মেরুতে ভিড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা ও তরিকত ফেডারেশনের ১৪ প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়। আওয়ামী লীগের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিও ২৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। অন্যদিকে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে নামেন গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিজেপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এনপিপি ও পিপিবির ৪৩ প্রার্থী। এর বাইরে জোটে থাকা অন্য দলগুলো নিজ নিজ প্রতীকে তাদের প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেন।
সহিংসতায় স্থগিত ২২ কেন্দ্র : ভোটগ্রহণের সময় সহিংসতার কারণে ২২ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ৪০ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২২টিতে সহিংসতা হয়েছে। এ কারণে কমিশন এসব কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে। বাকি আসনে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। সহিংস কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।