বকেয়া মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পরিশোধ করতে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ না করলে অপারেটরটির ট্যারিফ অনুমোদন ও এনওসি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
২১ মার্চ ফোরজি লাইসেন্স ফি ও টেক-নিউট্রালিটি ফির বিপরীতে ১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ভ্যাট পরিশোধে রবি আজিয়াটার অনুকূলে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট)। পরবর্তী সময়ে এ অর্থ আদায়ে সহযোগিতা চেয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় এলটিইউ-ভ্যাট। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি ২১২তম কমিশন সভায় দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে সাত দিনের মধ্যে রবিকে বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। আর এই সময়ে মধ্যে বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ না করলে রবির সব ধরনের সেবা (ডাটা প্যাকেজ, টকটাইম, এসএমএস প্যাকেজ) বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, এ দুই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ১৮ এপ্রিল রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (অর্থ) হাসিবুল কবির স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে রবিকে জানানো হয়, সাত দিনের মধ্যে রবি ওই টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিটিআরসি তাদের সকল প্রকার ট্যারিফ অনুমোদন এবং নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) বা অনাপত্তিপত্র প্রদান বন্ধ করবে। এ ছাড়া এনবিআর এবং এলটিইউ-ভ্যাট দফতরকে অবহিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে পাওনা চেয়ে ১৯ এপ্রিল এনবিআর বিটিআরসির কাছে আবেদন করে, যার প্রেক্ষিতে বিটিআরসি রবিকে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ভ্যাট পরিশোধের জন্য।
বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়, এনবিআরের এলটিইউ-ভ্যাট শাখা রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কাছ থেকে ফোরজি বা এলটিই লাইসেন্স অ্যাকুইজিশন ফি’র ওপর মূসক বাবদ ৫০ লাখ এক হাজার টাকা এবং টেক-নিউট্রালিটির ওপর মূসক বাবদ ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার ৫২৯ টাকা ৫৮ পয়সা দাবি করে। কিন্তু দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও রবি তা পরিশোধ করেনি বা করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এটি অপারেটরটির ফোরজির লাইসেন্স ও গাইডলাইনের শর্ত ভাঙার শামিল। তাই বিটিআরসি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে রবির ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনে এলটিইউর এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই টিম চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির গুলশানের করপোরেট অফিস পরিদর্শন করে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি-রেকর্ড পর্যালোচনা করে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। এরপর পাওনা ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে দাবিনামা পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ফলে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর ২৬ ধারা অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারি অন্য ক্ষেত্রের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে এলটিইউ-ভ্যাট দফতর রবির সব ব্যাংক হিসাব তিন দিনের জন্য জব্দ করেছিল।
এদিকে এই চিঠির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঘটনাটি ভ্যাট বা কর ফাঁকি নয়। এটি এনবিআরের সঙ্গে রবির দীর্ঘদিনের চলমান বিতর্ক।
রবির কমিউনিকেশন ও করপোরেট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট একরাম কবির বলেন, আইন অনুসারে চিঠিতে উল্লিখিত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে করদাতার অনুকূলে শুনানির সুযোগদান সংক্রান্ত আইনের অন্যান্য বিধান অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা, আমরা এক্ষেত্রে কোনো শুনানির সুযোগ পাইনি। তবে যথাসময়েই চিঠির উত্তর দেওয়া হবে বলে জানান রবির এই কর্মকর্তা।