ছবি : ইন্টারনেট

খাদ্য

বিরিয়ানি যেভাবে ঢাকার

  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল, ২০১৮

জনশ্রুতি আছে, একবার মুঘল সম্রাজ্ঞী মমতাজমহল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গেলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী দেখলেন, সৈনিকদের স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ করুণ! এ অবস্থায় মিলিটারি মেসের বাবুর্চিকে তিনি নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে, যা সৈনিকদের ভগ্ন স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে। সঙ্গে যেন ঘিও থাকে।

শুরু হলো সম্রাজ্ঞীর আজ্ঞা পালন। ঘিয়ে ভাজা হলো চাল। মেশানো হলো মাংস। আর ওই রান্নায় মিশল বাদামসহ কয়েক ধরনের মসলা। সম্রাজ্ঞী মমতাজমহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে পরিচিত।

বিরিয়ানির ইতিহাস নিয়ে ভিন্নমতও আছে। কারো মতে, তুর্কি-মোঙ্গল শাসক তৈমুর লং মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেন। আর তার অন্যতম একটা পথ ছিল ভারত। ১৩৯৮ সালের দিকে তৈমুরের নাগালে চলে আসে ভারতের কিছু অংশও। এ এলাকায় সেনাদের খাবারটা কী হবে? সেনাদের তো হূষ্টপুষ্ট রাখা চাই। এমন ভাবনা থেকেই সেনাদের জন্য মাটির পাত্রে চাল, মশলা আর মাংস মিশিয়ে একসঙ্গে রান্না করা হতো। বিরিয়ানির স্বাদে তৈমুরের বাহিনী মুগ্ধ হয়েছিল, হয়েছিল হূষ্টপুষ্টও।

ঢাকা শহরের ট্রেড মার্ক হিসেবে যদি অল্প কিছু জিনিসকে বেছে নিতে বলা হয়, নিঃসন্দেহে বলা যায় ঢাকাই কাচ্চি হবে অন্যতম। মূলত ঢাকায় মুঘলদের হাত ধরে এসেছিল বিভিন্ন মোগলাই আইটেম, যার মধ্যে বিরিয়ানি অন্যতম। বলা যায়, ঢাকার গোড়াপত্তন আর ঢাকার বাহারি খাবারের বিকাশ একই সূত্রে গাঁথা।

তবে ঢাকাই বিরিয়ানির নাম উঠলে অবধারিতভাবে যে নামটি চলে আসবে সবার আগে সেটি হলো হাজীর বিরিয়ানী। ১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন সাহেবের হাত ধরে যাত্রা শুরু হওয়া এই বিরিয়ানির রেসিপির কদর আজো ঢাকা শহরের মানুষের মুখে মুখে। তিন প্রজন্ম ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন হাজীর বিরিয়ানির স্বত্বাধিকারীরা। হাজীর বিরিয়ানির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বিরিয়ানি শিল্পও। এ ছাড়াও চানখাঁরপুলের হাজী নান্নার বিরিয়ানি, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি, নারিন্দার ঝুনুর বিরিয়ানিসহ আরো অসংখ্য বিরিয়ানি হাউজ গড়ে উঠেছে নতুন ও পুরান ঢাকার অলিতে-গলিতে। ঢাকাই বিরিয়ানি দেশের সীমা ছাড়িয়ে এখন সুবাস ছড়াচ্ছে সুদূর প্রবাসেও।

 

ইশতিয়াক আবীর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads