বাংলাদেশ বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের সম্ভাবনাগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে শুরু হয়েছে বিপিও সামিট। রোববার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনের এই সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং বা বাক্য এই সামিটের আয়োজন করেছে। আর বিপিও সামিটের তৃতীয় এই আসরে সহযোগিতা দিচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ১০ বছর আগেও দেশে বিপিও নামের কোনো খাত ছিল না। এমনকি ১০ বছর আগে আইসিটি খাতটিই পরিচিত ছিল না দেশের মানুষের কাছে। তা এখন বিশ্বের খুব কম দেশ আছে যারা বাংলাদেশকে আইটি খাতের অগ্রযাত্রার জন্য চেনে না।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বিপিও খাতে ৩০০ কর্মী ছিল। সেই কর্মীসংখ্যা এখন ৪০ হাজার। প্রতিবছর আমরা এখন ৩০ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আগামী ২০২১ সালে আমরা এক লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার টার্গেট নিয়েছি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এই তরুণরা জনশক্তিতে পরিণত হবে। বাক্য ও বেসিস এই তরুণদের মধ্য থেকে কর্মী বাছাই করে নিতে পারে।
তিনি বলেন, এই খাতে দশ বছর আগে যেখানে আমরা মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করতাম, সেখানে এখন আমরা ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করতে শুরু করেছি।
তিনি বলেন, আমরা একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলব, যেন তরুণরা প্রশিক্ষণের পর নিজেরাই একেকজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন। এখন এটা আমি বলতে পারি, ফ্রিল্যান্সার খাতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের এক নম্বর গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। তাই শুধু ইন্টারনেট আর ল্যাপটপ থাকলেই হলো। আমরা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাও নিশ্চিত করব। যেকেউ যেকোনো স্থানে বসে আইটি সেক্টর থেকে উপার্জন করতে পারবেন।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা সারা দেশে কোটা আন্দোলন দেখলাম। সরকার প্রথমবারের মতো কোটা সংস্কারের উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, প্রতিবছর জনপ্রশাসনে আমরা মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার লোককে নিয়োগ দিতে পারি, এটা সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য। এর চেয়ে বেশি চাকরিপ্রার্থীকে কিন্তু আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই চাকরি দিতে পারি। তরুণদের বলব, সরকারি চাকরির দিকে এত না ঝুঁকে আইটি সেক্টরের দিকেও ঝুঁকতে পার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, সৃজনশীল অর্থনীতির কথা এখন বিশ্বজুড়েই শোনা যাচ্ছে। অনেকেই এটি নিয়ে নানা কথাও বলছেন। তবে এটা যে একটা ভালো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। আমরা বিপিও সামিট আয়োজন করে এই বার্তাটাই বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাইছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং টেলিযোগাযোগ ও তথপ্রযুক্তিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে বিপিওর বাজার এক বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী কী প্রয়োজন তা খুঁজে বের করার জন্যই বিপিও সামিট।
ইমরান আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, দেশের আইসিটি খাতে অনেক বিনিয়োগ এসেছে এটা সত্যি। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমন কিছু ইনস্টিটিউশনে বিনিয়োগ করতে হবে। আমারের বিপিও খাত খুবই সুযোগ সৃষ্টিকারী, তাই এদিকে নজর দিতে হবে।
বিপিও সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, তথ্যপ্রযুক্তি অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) একেএম খায়রুল আলম এবং বাক্যর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ।