একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের মনোনয়ন না পেয়ে যারা বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাদের জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এক চিঠিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত করার কাজে আপনার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।’ তিনি লেখেন, ‘আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকতা সবকিছুই আমার বিবেচনায় আছে।’
গতকাল শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষর দেওয়া একটি চিঠি রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা প্রার্থী হন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তারা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হন।
মনোনয়নবঞ্চিতদের উদ্দেশে চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যগণের সুচিন্তিত মতামত, তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ এবং আমাদের সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত একাধিক নিবিড় জরিপ কার্যক্রমের সুপারিশের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘একাধিক আবেদনকারীর মধ্য থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করার কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ। আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি আবেদনপত্র ও প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত এবং মাঠপর্যায়ের জরিপের ফলাফল পর্যালোচনা করে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।’
চিঠিতে শেখ হাসিনা দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে টেকসই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আবারো বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। সেই বিজয়ের অংশীদার হবেন আপনিও। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে নৌকা মার্কাকে পরাজিত করার সাংগঠনিক শক্তি আর কারো নেই।’
‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করি, আগামী নির্বাচনে আপনার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আপনার সকল সাংগঠনিক দক্ষতা, শক্তি ও সামর্থ্য আওয়ামী লীগের বিজয়কে সুনিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের গত এক দশকের অর্জিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংগঠনের একজন আদর্শবান, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে আপনার স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি।’
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তত ৯৫ জনের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে বেশ কয়েকজন বাদ পড়েছেন। বাদ পড়ার পর প্রার্থিতা ফিরে পেতে কেউ কেউ আপিল করেননি। এ ছাড়া কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করেছেন। এসব বাদ দিয়ে এখনো আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য মাঠে আছেন। তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দলের প্রধান শেখ হাসিনা সবাইকে এই চিঠি দিয়েছেন।