না, আজ আর অন্য কোনো বিষয় নিয়ে লিখব না। তিন দিন আগে আমরা পালন করেছি আমাদের মহান বিজয় দিবস; বিজয়ের উনপঞ্চাশতম বার্ষিকী। আমার আজকের লেখার প্রতিপাদ্য সেই বিজয়ের আবেগমথিত স্মৃতি। সেই স্মৃতিরই রোমন্থন করব আজ। সে সময় আমি নিতান্তই বালক। পড়ি সপ্তম শ্রেণিতে। তবে রাজনীতির খোঁজ-খবর রাখতাম। আমাদের দেশটা যে শত্রুকবলিত এবং ওই শত্রুর হাত থেকে একে মুক্ত করা অতি জরুরি, একথাটি বোঝার মতো জ্ঞান হয়েছিল। রাজনীতির মাঠে হাঁটাচলা শুরু করেছিলাম তারও আগে। আমাদের বাড়িতে একটি রাজনৈতিক আবহ বিরাজ করত। আমার অগ্রজ গিয়াসউদ্দিন খান বাদল তখন পূর্ববাংলা ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। চাচাতো ভাই আজহার উদ্দিন আনিস, স ম আবদুল কুদ্দুস ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপের) স্থানীয় নেতা। উনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় এই বড়ভাইদের সঙ্গে মিছিলে শামিল হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে তুলে স্লোগান ধরেছিলাম- ‘আইয়ুব-মোনায়েম দুই ভাই, এক রশিতে ফাঁসি চাই’; ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’; ‘আসাদের মন্ত্র, জনগণতন্ত্র’। সে সময় শ্রীনগরে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আকরাম হোসেন ময়না; যিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, শ্রীনগর কলেজের ছাত্রনেতা জয়নাল আবেদীন, যিনি পরে বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের ডিএমডি হয়েছিলেন, ফজলুল হক সেলিম, মো. আনোয়ার হোসেন, ইদ্রিস আলী মিয়া, আমার চাচাতো ভাই আজহারউদ্দিন খান আনিস, স ম আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ। যেদিন মিছিল হতো কুদ্দুসদা আমাদের স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে আসতেন। আমরা মিছিলের সঙ্গে হাঁটতাম, সবার সঙ্গে গলা মিলাতাম।
আমার বড় ভাই ঢাকা থেকে ‘গণশক্তি’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ডাকযোগে পাঠাতেন আমার চাচাতো ভাইকে। তার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে সেটা পড়তাম। কিছু বুঝতাম, কিছু বুঝতাম না। মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান খান, কাজী জাফর আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ তোয়াহা (গণশক্তির সম্পাদক), ড. আাালীম আল রাজীসহ বেশ কয়েকজন ডাকসাইটে নেতার নামের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তখনই। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় সবার মনে আশার সঞ্চার করে। বাঙালিরা এবার পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসবে— এমন কথা শুনতাম বড়দের মুখে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা বলাবলি শুরু করলেন— না, এবারো বোধ হয় ওরা (পশ্চিমারা) আমাদের ক্ষমতা দেবে না। তারপরের ঘটনাবলি সবারই জানা। কেন এবং কোন পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাকের পাশাপাশি সরাসরি স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা বলেছিলেন এবং কীভাবে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা আজ আর কারো অজানা নেই। তাই বিজয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সেসব কথার চর্বিতচর্বণ করতে চাই না। এখানে শুধু বিজয়ের দিনটির স্মৃতি রোমন্থন করতে চাই।
একটি নতুন দেশ, নতুন রাষ্ট্রের জন্মতিথির প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার আনন্দ সবার ভাগ্যে হয় না। আমার পরম সৌভাগ্য যে, আমি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমির অভ্যুদয়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। এখনো স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে সেদিনের সে আবেগ-অনুভূতির কথা! আমাদের এলাকা অর্থাৎ বিক্রমপুরের শ্রীনগর মুক্ত হয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়ের উনত্রিশ দিন আগেই, অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর। সেদিন সকাল দশটার দিকে পাক হানাদার বাহিনী শ্রীনগর ডাকবাংলো থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত খাল (আমরা বলি বড়খাল) দিয়ে নৌকাযোগে লৌহজং হয়ে মুন্সীগঞ্জের দিকে যাত্রা করে। নৌকায় মাল-সামানা থাকলেও হানাদার বাহিনীর সদস্যরা খালের পূর্বপাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ওদের দলটি আমাদের গ্রাম বরাবর আসার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে পশ্চিমপাড়ে অ্যামবুশ করে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে। এই হঠাৎ আক্রমণে হানাদার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। সেদিন সারাদিন যুদ্ধ হয়েছিল। পাকবাহিনীর ষাটজন সদস্যের একজনও জীবন নিয়ে ফিরতে পারেনি। ছত্রভঙ্গ হানাদার বাহিনীর যে সদস্যকে যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানেই হয় মুক্তিযোদ্ধারা, না হয় স্থানীয় জনগণ পিটিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলেছিল। একটি হানাদার সৈন্য খাল পেরিয়ে আমাদের গ্রামে ঢুকেছিল। আমার চাচাতো ভাই আজাহারউদ্দিন খান আনিস ছোরা দিয়ে কুপিয়ে সেটাকে মেরে ফেলেন। মিলিটারি হত্যার সে দৃশ্য দেখে আমরা সোৎসাহে চিৎকার করেছিলাম ‘জয় বাংলা’ বলে। শ্রীনগরের ওই যুদ্ধটি একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ। পরবর্তী সময়ে ওই যুদ্ধকে উপজীব্য করে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কবি ফয়েজ আহমদ তার বিখ্যাত কবিতা ‘শ্রীনগরে যুদ্ধ’ লিখেছিলেন। শ্রীনগর মুক্ত হওয়ার পর আমরা অনেকটাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। আমাদের এলাকায় পাক হানাদাররা আর ঢুকতে পারবে না— এটা একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ শ্রীনগর যুদ্ধের সপ্তাহখানেক পরে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি বড়সড় কনভয় পুনরায় সিরাজদিখান থানার সৈয়দপুরে ধলেশ্বরী নদী পাড়ি দিয়ে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু মুন্সীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সব গ্রুপ সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করেছিল।
এদিকে দিন যতই যাচ্ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ততই নিকটবর্তী হচ্ছিল। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে দেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি ও আকাশবাণীতে আমরা সেসব খবর শুনে পুলকিত হই আর আশায় বুক বাঁধি কবে স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে মিছিলে যাব। অবশ্য এর আগেই স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে মিছিল করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। শ্রীনগর মুক্ত হওয়ার দুদিন পরে এক বিকেলে সে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল থানা সদরে। মিছিল শেষে শ্রীনগর থানা ভবনের সামনে সভা হয়। তাতে অন্যদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সংবাদ পাঠক বাবুল আখতারের পিতা ডা. আবদুল কাদের সাহেবও বক্তৃতা করেছিলেন।
ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভুটান বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর পরদিনই স্বীকৃতি দেয় ভারত। তারপরই বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় মিত্র বাহিনী। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের খবরে তখন নিত্যনতুন এলাকা শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে। আমরা দল বেঁধে ট্রানজিস্টারে সেসব খবর শুনি আর উল্লাস প্রকাশ করি। আকাশে তখন ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর বািমানের ওড়াউড়ি। এরই মধ্যে একদিন সকালে আমাদের গ্রাম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। আকাশবাণীর খবরে বলা হলো, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের তেলের ডিপো বিধ্বস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকারের তেল।
তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিবিসির খবরে জানা গেল বিকালে ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণ দলিলে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে সই করেছেন ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজি এবং মিত্র বাহিনীর পক্ষে তা গ্রহণ করেছেন জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে বড়দা, আমি, ছোটভাই মেজবা ও রুহুল আমিন বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। বাড়ির সামনের ছোট্ট মাঠটিতে দাঁড়িয়ে বড়দা গলা ফাটিয়ে স্লোগান ধরলেন— জয় বাংলা, স্বাধীন হলো স্বাধীন হলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। আমাদের স্লোগান শুনে এবাড়ি ওবাড়ি থেকে উল্লসিত মানুষ বেরিয়ে আসতে শুরু করল। কেউ হারিকেন হাতে, কেউ বা টর্চ হাতে। কেউ এলো অন্ধকারেই। পৌষের তীব্র শীতের রাতের ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে মানুষগুলোর অবয়ব ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। সবাই জড়ো হলাম বড় মাঠে। সেখানে এলেন মিরণ দা, আনিস দা, শামসুদ্দিন দা, কুদ্দুস দা, তাসের দা (বর্তমানে নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক মাহমুদ খান তাসের)। তাসের দা গগণবিদারি কণ্ঠে স্লোগান তুললেন— ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ।’ ততক্ষণে গ্রামের সব বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর-বালক এসে শামিল হয়েছে সেই মিছিলে। একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করছে, কারো কারো চোখে আনন্দাশ্রু। সবাই মিলে সেই আনন্দের কাফেলাকে নিয়ে চলতে শুরু করলাম। চারদিক থেকে ভেসে আসছিল স্বাধীনতার আনন্দে উদ্বেলিত মানুষের উল্লাসধ্বনি। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত আকাশ বাতাস। এভাবে কতক্ষণ মিছিল চলেছিল আজ এত বছর পরে তা সঠিক মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে, যখন বাড়ি ফিরলাম, পৌষের প্রচণ্ড শীতেও রীতিমতো ঘামছিলাম। মুক্তির আনন্দে শীত কোথায় পালিয়েছিল কে জানে!
পরদিন সকালে ছুটে গেলাম আমাদের পুরান বাড়িতে আমার এক দাদির সঙ্গে দেখা করতে, যার বড় ছেলেকে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই হানাদার বাহিনীর দোসর বিহারিরা হত্যা করেছে। তিনি কুষ্টিয়ায় থাকতেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পাড়া-প্রতিবেশী নারী-পুরুষে ভরতি দাদির উঠোন। আমি দাদির কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললাম— দাদি, আমার জওয়াহের কাকার রক্তের বিনিময়ে আজ আমাদের দেশ স্বাধীন। আপনি কাঁদবেন না। আপনি একজন বীর শহীদের মা। দাদি কান্না থামিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের গ্রামের চারজন শহীদ হয়েছেন। আমার কাকা জওয়াহের শেখ, মো. আবদুল লতিফ, ওয়ালিউদ্দিন খান মন্টু এবং আবুল হাশেম খান। এমন ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা এ স্বাধীন দেশটি পেয়েছি।
সেদিন যখন শ্রীনগর বাজারে পৌঁছলাম, তখন সেখানে ঈদ উৎসব চলছে। পরিচিতরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করছে। মুহূর্তে খালি হয়ে গেল মিষ্টির দোকানগুলো। চারদিক থেকে আসছিল বিজয়ের উল্লাসে উদ্বেলিত মানুষের মিছিল। মুক্তিযোদ্ধারা আকাশের দিকে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন। যে গুলির আওয়াজ ক’দিন আগেও মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করত, আজ সেই গুলির আওয়াজ শুনে মানুষ সোল্লাসে চিৎকার করছে! দুপুর পর্যন্ত এভাবে শ্রীনগরের মাটি দাপিয়ে বীরোচিত একটি অনুভূতি নিয়ে ফিরে এলাম নিজ গ্রামে।
আজ উনপঞ্চাশ বছর পরে স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে, তাহলে আমি বলতে পারি, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গোটা বাংলাদেশ যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক মতভেদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সবার একটাই পরিচয়— আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি আমাদের এই দেশটিকে। কিন্তু বিজয়ের সে আনন্দ ফিকে হয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি। অচিরেই আমরা রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিভেদের কবলে পড়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন একতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার সদগুণগুলো হারিয়ে ফেলি। এ আমাদের জাতীয় জীবনের এক ট্র্যাজেডি!
আজ এত বছর পরে যদি নিজেকে প্রশ্ন করি— মন তুই সত্যি করে বল, স্বাধীনতা নিয়ে তোর প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কি না, কোনো উত্তর পাই না। তবে একটি চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয় বুকের মাঝে। আজ এই স্বাধীন দেশেও যখন সন্ত্রাসীদের হাতে মানুষের খুন হওয়ার খবর পাই, দুর্বৃত্ত কর্তৃক ইজ্জতহারা নারীর আর্তনাদে যখন কেঁপে ওঠে আকাশ-বাতাস, তখন প্রশ্ন জাগে, এজন্যই কি ত্রিশ লাখ মানুষ তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল? আজ যখন খবর পাই রাষ্ট্রীয় অর্থ লুণ্ঠন করে এক শ্রেণির আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী তা বিদেশে পাচার করে গড়ে তুলছে বেগমপাড়া, তখন প্রশ্ন করে মন— এজন্যই কি দেশটা স্বাধীন করা হয়েছিল? এজন্যই কি বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের নয়টি মাস নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ারে থেকেছেন? এই দুর্বৃত্তদের লুণ্ঠনের মওকা করে দেওয়ার জন্যই কি মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস খেয়ে না খেয়ে বনে-জঙ্গলে জীবন বাজি রেখে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন? শুধুই প্রশ্ন চারদিকে। জবাব নেই। বোধকরি জবাব দেওয়ার কেউ নেইও।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক