নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াসহ অর্ধশত হেভিওয়েট নেতা ছিটকে পড়ছেন। বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ঝাঁকুনি দিয়েছে। এমন চিত্র তাদের কাছে আশ্চর্যজনক নয়। আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। এ নিয়ে তারা আর ভাবছেন না। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ফিরিয়ে আনার একটা চেষ্টা করবেন তারা। ব্যর্থ হলে বিকল্প প্রার্থীদের সামনে রেখেই ভোটের মাঠে নামার ছক তৈরি করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকার বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাছাইয়ে অনেক প্রার্থী বাতিল হওয়ায় তারা চিন্তিত নন। কারণ তারা আগে থেকেই জানতেন এমন হতে পারে। এ জন্যই প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রায় ৭টি আসনে একেবারে কোনো প্রার্থী না থাকায় কিছুটা ভাবনা থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে ভিন্ন কৌশলের কথা চিন্তা করছে দলটি।
দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে মনোনয়ন বাতিলের শঙ্কায় জাতীয় সংসদরে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৫ আসনে ৮০০ প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেয় বিএনপি। এর মধ্যে ৬৯৬ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। রোববার যাচাই-বাছাইয়ে খালেদা জিয়াসহ মোট ৮১ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। সে হিসাবে এখনো বিএনপির ৬১৫ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ আছে, যা প্রতিটি আসনে দুইজনেরও বেশি। এছাড়া গতকাল সোমবারই বাতিল হওয়া ৪৬ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেছেন।
বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, বাতিল হওয়া আসনগুলোতে প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপিল করার সুযোগ এখনো রয়েছে। সেখানে আপিলে মনোনয়ন ফিরে না পেলে সবশেষ আদালতেও যেতে পারেন প্রার্থীরা। তাতেও কাজ না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলে ভিড়িয়ে বা সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে শূন্যস্থান পূরণ করা যায় কি না সেই চেষ্টা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানান, এখনো বিএনপির যেসব প্রার্থী আছেন তাদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক করাও একটা কঠিন কাজ। এরই মধ্যে প্রায় সব আসনের নেতারাই চূড়ান্ত তালিকায় থাকতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। মনোনয়ন বোর্ডের নেতাদের বাসায় এখনো ভিড়। কিন্তু ৮ ডিসেম্বরের আগে প্রার্থী চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন কমিশনের আপিল নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে। এর মধ্যে বিএনপির হেভিওয়েট কোনো নেতার প্রার্থিতা বৈধ হলে তাকেই দলের চূড়ান্ত প্রার্থী করা হবে। নইলে বিকল্প প্রার্থী দিয়েই ভোটের লড়াইয়ে থাকবে বিএনপি।
জানা গেছে, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গত রাতে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রার্থী বাতিলের পরে কারা সবচেয়ে যোগ্য তা নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া ভোটের মাঠে কে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারবেন সে বিষয়টিও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জোটের শরিকদের শেষ পর্যন্ত কয়টি আসনে ছাড় দেওয়া হবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার ভাবনার চেয়ে কম আসন ছেড়েই জোট নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।
বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, বিএনপির এখন একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকা। গণবাতিলের মাধ্যমে বিএনপিকে দুর্বল করা সম্ভব হবে না। বিকল্প যেসব প্রার্থী আছে তাদেরকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কী অবস্থা তার একটি রিপোর্টও প্রার্থীদের কাছে চাওয়া হয়েছে।