আর হয়তো দেখা হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংরক্ষিত ছবি

সরকার

আর হয়তো দেখা হবে না

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

মন্ত্রিসভা থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আমরা একসঙ্গে এত দিন কাজ করেছি। আর হয়তো দেখা হবে না, এভাবে একসঙ্গে বৈঠকে বসব না। আবার কবে এমন হবে তাও জানি না’- গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা বলেন, আজ (সোমবার) ছিল আমাদের শেষ বৈঠক। এরপর মন্ত্রিসভার আর কোনো বৈঠক হবে না। সবাই নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবেন নির্বাচনী কাজে। আর হয়তো দেখা হবে না। আগামীতে জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই আসবেন। অর্থাৎ জনগণ কাকে ভোট দেবে এটা তারাই জানেন। নতুন সংসদ হবে, নতুন কেবিনেট হবে, সেখানে কারা আসবে সেটা তো এখনই বলা যায় না। নির্বাচনে যদি আমরা জয়লাভ করিও তখন মন্ত্রিসভায় কে থাকবেন তা তো বলা যায় না। কাজেই সবাই ভালো থাকবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।

প্রধানমন্ত্রী যখন গতকাল মন্ত্রিসভায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এসব কথা বলছিলেন তখন মন্ত্রীরা ভাবলেশহীন ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী বলেন, একজন রাজনীতিবিদের সর্বোচ্চ চাওয়া থাকে মন্ত্রী হওয়া। আর বেশিরভাগ মন্ত্রীর পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হতে চলেছে। আর কত? এ কারণে হয়তো মন্ত্রীদের অনুভূতি ছিল ভাবলেশহীন। এ ছাড়া আরেকটি কারণও হয়তো থাকতে পারে। তিনি নিজেই সে কারণ ব্যাখা করে বলেন, মন্ত্রীরা হয়তো ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আবার আওয়ামী লীগসহ মহাজোটকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনবেন। আর পার্টি জয়ী হলে তারা আবারো মন্ত্রী হবেন। এ কারণে মন্ত্রীরা শেষ কেবিনেট বৈঠকে হয়তো অনুভূতিশূন্য ছিলেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী ছাড়া কোনো মন্ত্রী বৈঠকে কথা বলেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।     

জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি জাতীয় পার্টির একজন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আমাকে আপনার মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। গত পাঁচ বছর আপনার মতো একজন রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এজন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এই পাঁচ বছরে আমার মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেননি। বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন জাতীয় পার্টির প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রীদের শেষ বৈঠক গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। এটি ছিল ২০৩তম বৈঠক। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। বিদ্যমান সরকারে আওয়ামী লীগ ছাড়াও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) তিনজন, জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির একজন মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, শ্রম আইন-২০১৮, স্বর্ণ নীতিমালা, অনলাইন নীতিমালার মতো উল্লেখযোগ্য আইন অনুমোদন করেছে।

গতকালের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ছাড়া ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড-২০১৮’-এর বাস্তবায়ন বিষয়ে একটি মন্ত্রিসভা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাকস (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন) রেগুলেশন ১৯৫৮ সংশোধন করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া ঢাকায় নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৮’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

শ্রম আইন বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইপিজেডে সমিতি ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেডে) শ্রমিকদের কল্যাণ সমিতি (ট্রেড ইউনিয়ন) গঠনের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সমর্থন হার কমছে। আগে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগলেও নতুন আইনে তা ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এমন বিধান রেখেই ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংসদ অধিবেশন না থাকায় আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে বলেও জানান মোহাম্মদ শফিউল আলম।

নবম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশ পর্যালোচনায় মন্ত্রিসভা কমিটি : সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে নবম মজুরি বোর্ড যে সুপারিশ করেছে তা পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংস্কৃতিমন্ত্রীকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটিতে শিল্পমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নবম বেতন কাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেজন্য কমিটিকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। এই কমিটি (মন্ত্রিসভা কমিটি) যেটা চূড়ান্ত করবে সেটাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। যে সুপারিশ এসেছে তারা তা পর্যালোচনা করবেন। পাঁচটি শ্রেণিতে ১৫টি বেতনক্রম নির্ধারণের সুপারিশ এসেছে জানিয়ে শফিউল বলেন, প্রথম তিন গ্রেডে ৮০ শতাংশ এবং শেষের তিন গ্রেডে ৮৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ওয়েজবোর্ড কমিটির সুপারিশের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মূল বেতন ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে অষ্টম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার, যা ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে গত ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর ধরা হয়।

পার্বত্য এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ বাড়ছে : পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সরকারি কাজে ভূমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্তরা বাজারমূল্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো ২০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাবেন। বেসরকারি কাজে অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাজারমূল্যের সঙ্গে আরো ৩০০ শতাংশ। বর্তমানে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় বাজার মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ধরে। এসব সুবিধা রেখে দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাকস (ল্যান্ড একুজিয়েশন) রেগুলেশন ১৯৫৮ সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads