গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ৩৮৮১ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। অপরদিকে বর্তমানে এ ধরনের চার্জ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেছে ভোক্তা অধিকার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব)। গতকাল সোমবার মূল্য সমন্বয় প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত শুনানিতে প্রস্তাবনাগুলো উঠে আসে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি অডিটোরিয়ামে শুনানির প্রথম দিন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) সঞ্চালন ব্যয় বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী ২১ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এ শুনানি চলবে। এ দিন শুনানিতে জিটিসিএল গ্যাস সঞ্চালন চার্জ ইউনিটপ্রতি শূন্য দশমিক ৫৫৫৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এর আগে তারা শূন্য দশমিক ৪৪৭৬ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটারে জিটিসিএলের সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ২৫৪ টাকা।
শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম, বুয়েটের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, ঢাবির অধ্যাপক বদরুল ইমাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। নূরুল ইসলাম শুনানিতে বলেন, ‘যে কোম্পানি মুনাফা করছে তার গ্যাসের সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। সাধারণ মানুষের ওপর এর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও বিতরণ কোম্পানিগুলোর ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। যার পরোক্ষ দায়ভার গ্রাহকদের ঘাড়েই চেপে বসবে।’ গ্যাসের পাইকারি দাম নির্ধারণের পরেই সঞ্চালনের চার্জ নির্ধারণ করা উচিত বলে অভিমত দেন তিনি।
ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘দাম বাড়ানোর যুক্তির সঙ্গে আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় থাকা দরকার। এখানে তা নেই। সমন্বয় করলে চার্জ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। জিটিসিএলের একজন চাকরিজীবী বছরে ৪ লাখ টাকা বাড়তি বোনাস নিচ্ছেন। যে কোম্পানি একজন চাকরিজীবীকে এই পরিমাণ বোনাস দিচ্ছে তার মুনাফা বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। লাভে থাকা কোম্পানির গ্যাস সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। গ্যাস সঞ্চালনে জিটিসিএল যে পরিকল্পনা করেছে তাও বাস্তবায়নযোগ্য নয়। গ্যাস নেই অথচ সঞ্চালন লাইন হচ্ছে একের পর এক। এটা বাস্তবসম্মত নয়।’
এর আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহূত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৪৮ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সার কারখানায় ব্যবহূত গ্যাসের ইউনিটপ্রতি দাম ২ টাকা ৭১ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা, আর শিল্প-কলকারখানায় ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা, সিএনজির দাম প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা থেকে ৪৮ টাকা বাড়ানোর আবেদন করা হয়। এ ছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহূত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ১৬ টাকা এবং চা বাগানে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ায় বিইআরসি। প্রথম ধাপে ১ মার্চ এবং দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে নতুন মূল্য আদায় শুরু হয়।