পল্লী অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার

ছবি: বাংলাদেশের খবর

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বাড়তি ৪৩০ কোটি টাকা চায় আরইবি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১২ মে, ২০১৮

২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে চায় সরকার। পল্লী অঞ্চলের ৩১ শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। পল্লী অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ৭৭ হাজার ১১০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণে চলতি অর্থবছরে পৃথক দুই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অতিরিক্ত ৪৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা চেয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ বিষয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) এবং শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নে বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) শীর্ষক দুই প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। বাড়তি অর্থ বরাদ্দে প্রাথমিক সম্মতি রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ইতোমধ্যেই কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছে পরিকল্পনা বিভাগ।

পরিকল্পনা বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এডিপি সংশোধনের সময় বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে দুই প্রকল্পে বাড়তি ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, এবার শুরু থেকেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে দক্ষতা দেখিয়ে আসছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২২ হাজার ৫৮১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৮৭৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আট মাসে বরাদ্দের ৭৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ ব্যয় করায় আরএডিপিতে ৩ হাজার ২৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ উন্নীত হয় ২৫ হাজার ৮৬১ কোটি ৮৯ লাখ টাকায়।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ অগ্রগতি থাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, গত বছরের ২১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯০৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে দুই প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৭৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। দুই প্রকল্পের আওতায় ৭৭ হাজার ১১০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে। দুই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে আরইবি। ২০১৯ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কাজ শেষ হলে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ২৭ লাখ নতুন সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশব্যাপী বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করায় সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি জানান, ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৫ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের মাধ্যমে ১ কোটি ৬২ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দিয়েছে আরইবি। পল্লীর শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছাতে ৪ লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে আরইবির এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। চলমান ১৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরো ৭৭ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বরাদ্দ রয়েছে ২৫ হাজার ৮৬১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ ১১৩ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করেছে ২০ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থবছরের ১০ মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ আরএডিপি বরাদ্দের ৭৯ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।

সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১০ মাসে ৭ হাজার ৯৬৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সরকারি তহবিল থেকে ব্যয়ের হার বরাদ্দের ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশ। ৪৪ প্রকল্পে ১১ হাজার ২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বিদেশি সহায়তা থেকে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৩৫০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বিদেশি সহায়তার ব্যয় ইতোমধ্যেই বরাদ্দ অতিক্রম করেছে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৫৩৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এ তহবিলের ব্যয় বরাদ্দের ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads