ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলির একটি বাসা থেকে এক কলেজশিক্ষিকা ও ব্যাংকারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যারা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। কোতোয়ালি থানার ওসি এএফএম নাসিম জানান, রোববার রাতে ওই লাশ উদ্ধারের পর নিহত কলেজশিক্ষিকার স্বামীকে সোমবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন তারা।
নিহত কলেজশিক্ষিকা সাজিয়া বেগম (৩৬) ফরিদপুরের সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে ঝিলটুলির ওই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। সাজিয়ার স্বামী শেখ শহীদুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি ঢাকার সূত্রাপুর থানার বানিয়ানগরে। ব্যবসার কাজে প্রায়ই তাকে ঢাকায় থাকতে হয়, তবে রোববার ঘটনার সময় তিনি ফরিদপুরেই ছিলেন। ব্যাংকার ফারুক হাসানের (৩৮) বাড়ি ঢাকার আগারগাঁও এলাকায়। তিনি ফরিদপুরে সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার অডিট কর্মকর্তা ছিলেন।
ওসি নাসিম জানান, বাড়ির মালিক রোববার রাতে পুলিশে খবর দিলে তারা সেখানে গিয়ে নিচতলায় ফারুকের ফ্ল্যাট থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করেন। সাজিয়া বেগমের মরদেহ দরজার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। গায়ে কোপের দাগও ছিল। আর ফারুক হাসানের লাশ ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলছিল।
বাড়ির মালিক নূর ইসলামের ছেলে ডেভিড সাংবাদিকদের জানান, রাত ১১টার দিকে তিনি বাড়ি ফিরে নিচতলার ওই ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পান। দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে মানুষের ঝুলন্ত দেহ দেখে সঙ্গে সঙ্গে তারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দুজনের লাশ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য।
ডেভিড জানান, কলেজশিক্ষিকা সাজিয়া বেগম ওই বাসা ভাড়া নেন এক বছর আগে। আর ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক পাশের ফ্ল্যাটে ওঠেন এক মাস আগে। তবে তিনি (ফারুক) নিয়মিত থাকতেন না। এবার বাসায় আসেন দুদিন আগে।
সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুলতান মাহামুদ জানান, রোববার স্বাভাবিকভাবেই কলেজে গিয়ে অফিস করেন সাজিয়া। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ডিউটি ছিল। সব সেরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কলেজ থেকে বেরিয়ে যান। রাতে উনার স্বামী ফোন করে বললেন, উনাকে নাকি খুঁজে পাচ্ছেন না।
সাজিয়ার স্বামী শহীদুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রোববার বিকাল ৪টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখনো সাজিয়া বলেছিলেন, তিনি বাসায় আছেন। ‘কিন্তু বাসায় ফিরে ওকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। ওর কলিগদের কাছেও ফোন দিয়েছি। রাত হয়ে যাওয়ার পরও না ফেরায় কোতোয়ালি থানায় গিয়ে একটি জিডি করেছি।’-বলেন শহীদুল ইসলাম।
ওই ঘটনায় শহীদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সোমবার সকালে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে কোতোয়ালি থানার ওসি এএফএম নাসিম জানান।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, তারা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকতেন। কেন তারা এক হলেন বিষয়টি পরিষ্কার নয়। তদন্ত করে দ্রুত এ ঘটনার কারণ বের করা হবে।