বাদই পড়লেন খালেদা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

ইসিতে তিনটি আপিলই নামঞ্জুর

বাদই পড়লেন খালেদা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর প্রার্থী হতে পারছেন না বিএনপির শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা তার আপিল গতকাল শনিবার খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে খালেদা জিয়ার শেষ ভরসা এখন উচ্চ আদালত।

গতকাল শনিবার শুনানির শেষ দিন সকাল থেকে দুই দফা বিএনপি প্রধানের করা তিন আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ করে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে বিকাল পর্যন্ত স্থগিত রাখে ইসি আপিল শুনানি পরিচালনা কমিটি। সকাল ও দুপুর দুই দফা শুনানি হয়। প্রথম দফা শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র আর্টিক্যাল ১২/ডি-ওয়ান অনুযায়ী বাতিল করেছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন বাতিল করলেও কারাগারে থাকা অবস্থায় এ আইন লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন যে গ্রাউন্ডে মনোনয়ন বাতিল করেছেন তার বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি। এই আপিল অবশ্যই বৈধ রায়ের যোগ্য।

সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় খালেদা জিয়ার তিন আপিল খারিজ করে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন আপিল শুনানি কমিটি। ৪-১ এর বিভক্তি রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য খালেদা জিয়ার আপিল খারিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। চার কমিশনারের মধ্যে মাহবুব তালুকদার খালেদার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন। বাকি তিন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী খারিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। কমিশনের তিন সদস্যের দেওয়া রায়ে সমর্থন জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বিএনপি নেত্রীর মনোনয়নপত্র বাতিল দেখিয়ে তিনটি আপিলই খারিজ বলে রায় দেন।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম খালেদার মনোনয়নপত্র অবৈধ জানিয়ে বলেন, দুর্নীতির দুই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি নির্বাচনের অযোগ্য। এই কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হলো। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীও একই যুক্তি দেখিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা ও অপর কমিশনারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন ফেনী-২, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে দাখিল করা বিএনপি প্রধানের তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এদিকে মনোনয়ন বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির শেষ দিনে গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ভিড় করেছিলেন রাজনীতির রথি-মহারথিরা। ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে ইসির আনুকূল্য পাওয়ার প্রত্যাশায় তারা দিনভর বসেছিলেন নির্বাচন ভবনের অস্থায়ী এজলাসে। তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা, মোরশেদ খান, মির্জা আব্বাস, আমানুল্লাহ আমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আফরোজা আব্বাসসহ অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের সবাই অবশ্য শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে বিদায় নিতে পারেননি। তবে হেভিওয়েটদের অনেকেই প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে ইসির সুবিচারের প্রশংসা করেছেন।

প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াদের মধ্যে আব্বাস দম্পতি ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী মোরশেদ খান, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ অনেকে রয়েছেন। আর বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীসহ অনেকে আপিলে প্রার্থিতা টেকাতে পারেননি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রাজনীতিকদের একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ নজর কাড়ে সবার। 

হুদা-আব্বাস পাশাপাশি

আপিল শুনানিতে এসে পাশাপাশি বসে কিছু সময় কাটান বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও দলটির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। পুরনো স্মৃতি হাতড়ানো এবং সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে খোশগল্পে মেতে ছিলেন তারা। দু’জনের এভাবে একান্ত আলাপচারিতা দীর্ঘ ৮ বছর পর বলে জানালেন তারা। আপিলে দুজনেরই মনোনয়নয়পত্র বৈধ হয়েছে।

হুদা ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়নপত্রে তিনি স্বতন্ত্র বা কোনো দলের নাম উল্লেখ করেননি। রিটার্নিং কর্মকর্তা এজন্যই তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে বৈধতা পান। কিন্তু সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন। ইসি সে আপিল খারিজ করে দেওয়ায় আব্বাস বৈধ প্রার্থী ঘোষিত হলেন। ঢাকা-৯ আসনে মির্জা আব্বাস পত্নী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খানের আপিল গ্রহণ করে তাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে ইসি।

এদিকে আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি ঢাকা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান, চট্টগ্রাম-৫ আসনের প্রার্থী মীর মো. হেলাল উদ্দিন। এর আগে একই আসনে তার বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দিনের মনোনয়নপত্রও আপিলে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

শেষ দিনের শুনানি শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে যুক্তফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দুটি আপিলই খারিজ করা হয়েছে। ঋণখেলাপির দায়ে টাঙ্গাইল-৪ ও টাঙ্গাইল-৮ আসনে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মনোনয়নপত্রে বৈধতা পেতে ৫৪৩ আপিলকারীর মধ্যে ২১৬ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। আপিলে বৈধতা পাওয়া প্রার্থীসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৪৯৫। আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামীকাল থেকে নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নেমে পড়বেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

তৃতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম-৫ মো. নাসির উদ্দিন ও মাসুদুল আলম বাবলু, চট্টগ্রাম-৮ এম মোরশেদ খান, চট্টগ্রাম-৯ মো. মোরশেদ সিদ্দিকী, জামালপুর-৩ নঈম জাহাঙ্গীর, নেত্রকোনা-১ আবদুল কাঈয়ুম খান, ময়মনসিংহ-৬ চৌধুরী মুহাম্মদ ইসহাক, চাঁদপুর-৪ জেড খান মো. রিয়াজউদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. মহিউদ্দিন মোল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সৈয়দ মাহমুদুল হক, রাজশাহী-৫ মো. আবু বকর সিদ্দিক ও নাদিম মোস্তফা, রাজশাহী-৬ মো. আবু সাঈদ চাঁদ (বিএনপি), যশোর-৫ মো. ইবাদুল খালাসি, যশোর-১ মো. সাজেদুর রহমান, যশোর-৪ লিটন মোল্লাহ, যশোর-৫ রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া-৪ মো. তাছির উদ্দিন, ঝিনাইদহ-২ আবু তালেব সেলিম, চুয়াডাঙ্গা-১ মোছা. মেরিনা আক্তার, টাঙ্গাইল-১ ফকীর মাহবুব আনম স্বপন, ঢাকা-১৭ শওকত আজিজ ও নাজমুল হুদা, ঢাকা-১৯ মো. কফিল উদ্দিন, জয়পুরহাট-১ আলেয়া বেগম, বান্দরবান পার্বত্য জেলা আসনে মামচিং এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা আসনে নতুন কুমার চাকমা। 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads