বরগুনার তালতলীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংগৃহীত ছবি

সরকার

আবার নৌকাকে ক্ষমতায় আনুন

বরগুনার তালতলীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন। গতকাল শনিবার বরগুনার তালতলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে যাকেই নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, ভেদাভেদ ভুলে তাকেই ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকার জয়ের ফলেই দেশ আজ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সেবার সুযোগ করে দিয়েছেন তাই আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, নৌকা মানেই উন্নয়ন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সমগ্র বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো কাজ করতে পারেনি অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশসেবার জন্য আগামী নির্বাচনে আবারো নৌকার বিজয় প্রয়োজন।

আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। আমাদের সরকারই বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার প্রচলন করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দেশের প্রতিটি এলাকায় ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, যার মাধ্যমে গ্রামের মানুষ প্রায় ২০০ প্রকার সেবা পাচ্ছে। জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সব ধরনের পরিকল্পনাই হাতে নিয়েছি।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের স্থান এ দেশে নেই, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের ফলে অনেক পরিবার ভুক্তভোগী হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আমরা মাদক নির্মূলের জন্য মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছি, যেন মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা দূরে থাকতে পারে। আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। আমি অভিভাবক, শিক্ষক ও সব ধর্মের মানুষের অনুরোধ করছি আপনারা আপনাদের সন্তানদের দিকে দৃষ্টি রাখবেন। তারা যেন কোনো প্রকার মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে নিজেদের জড়িয়ে না ফেলে।

সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সব সময়ই অবহেলিত ছিল, আমরা ক্ষমতায় এসেই তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। এ এলাকার মানুষ আর কষ্ট পাবে না। জীবনমান উন্নত হবে। আমরা এ অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছি। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সাইক্লোন শেল্টার ও এলাকায় যতগুলো বাঁধ আছে সবগুলোই মেরামত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমি বার বার মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছি। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া মিলিত হয়েই ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ আর আপনাদের দোয়ায় আমি বেঁচে গিয়েছি। যারা এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না, তাদের দ্বারা দেশের উন্নয়নও সম্ভব না। খালেদা জিয়া এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করায় আজকে জেল খাটছেন।

প্রতিটি গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধায় উন্নীত করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের প্রত্যেকটি গ্রামকে শহরে পরিণত করব। শহরের মানুষ যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, গ্রামের মানুষের জন্যও সেসব সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। আমাদের সরকার সে অনুয়ায়ী কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান লাভ করেছি, সেটা ধরে রাখতে আরেকটিবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিন, নৌকায় ভোট দিন। এ সময় তিনি জনসভায় উপস্থিত জনতার কাছে ওয়াদা চেয়ে বলেন, আপনারা ওয়াদা করুন, যাকেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় পাঠাব, তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগকে দেশের সেবা করার সুযোগ দেবেন। উপস্থিত জনতা তখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সামনে হাত তুলে ওয়াদা করেন। জবাবে শেখ হাসিনা জনতাকে ধন্যবাদ জানান।

তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবুল কবিরের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি, ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু এমপি, তালুকদার মো. ইউনুস এমপি, হাসানুর রহমান রিমন এমপি, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই এলাকায় এলএনজি টার্মিনাল করে দেব। যাতে এলএনজি শিল্প খাতসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগও আমরা নেব। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। উন্নয়নের কারণে কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়, গৃহহীন না হয়ে পড়ে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রেখেছি, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সনদের ব্যবস্থা করা হয়েছে, ৫৬০টি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যুবকদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনাসুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, বর্গা চাষিদের বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাসহ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্র্য বিমোচন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দ্রুত দুর্যোগের আগাম খবর পাওয়া যাবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরগুনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, বামনা ও বেতাগী উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বরগুনা জেলা গ্রন্থাগার, বরগুনা জেলা পুলিশ লাইনে মহিলা ব্যারাক নির্মাণ, বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ২১টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads