রাত পোহালে ভোট। সারাদেশের মত বগুড়ায় একাদশ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৭টি সংসদীয় আসনের ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রকার সরঞ্জাম পৌঁছেছে উপজেলা সহকারি রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ে।
জেলায় অতিগুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র রয়েছে ৫৬০টি। বাকি কেন্দ্রগুলো সাধারণ তালিকায় রয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে জেলায় র্যাব, সেনাসদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী প্রচার প্রচারণা থেমে গেছে। প্রার্থীরা তদের ভোট গ্রহণের দিনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ৭টি সংসদীয় আসন। এসব আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাদস, স্বতন্ত্র, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৪৭ জন প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে শেষ পর্যায়ে এসে বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি প্রার্থী মোরশেদ মিল্টন এর প্রার্থীতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সঠিকভাবে পদত্যাগ না করায় জটিলতার কারণে স্থগিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। ৪৬ জনরে মধ্যে জেলার ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৮ ভোটার ভোট দিয়ে ৭জন প্রার্থীকে জাতীয় সংসদে প্রেরণ করবে। চলছে তারই আয়োজন। ইতিমধ্যে জেলার ৯২৬টি ভোট কেন্দ্রর ৪ হাজার ৮১৭টি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে ভোট গ্রহণের জন্য। গত বুধবার ব্যালট পেপার ছাড়া সকল উপকরন পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলার ৭ টি আসনের সহকারি রির্টানিং অফিসারদের কাছে ব্যালোট পেপার পৌঁছে দেয়া হয়েছে এমনটাই জানালেন জেলা রির্টানিং অফিসার।
বগুড়া রির্টার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ ফয়েজ আহামদ জানান, গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৫৬০টি। বাকিগুলো সাধারণ ভোট কেন্দ্র ধরা হয়েছে। যদিও জেলায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যথেষ্ঠ সংখ্যাক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সর্বসময় মোতায়েন থাকছে। ভোটাররা যেন খুব সহজে ভোট প্রদান করতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবে। জেলায় বিজিবি থাকছে ১৬ প্লাটুন (৩২০ জন), প্রতিকেন্দ্রে ১২ জন করে মোট ১১ হাজার ১১২ আনসার সদস্য থাকছে। জেলার ১২টি উপজেলায় ৬৫০ জন সেনা সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে পুলিশের একটি মোবাইল টিম টহল দেবে।
এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ১০৪টি। এর মধ্যে প্রতিটি আসনে ৬টি করে বিশেষ মোবাইল টিম ৪২টি, সাধারণ মোবাইল টিম ৪৯টি ও স্ট্রাইকিং হিসেবে থাকবে আরও ১৩টি টিম। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে ২৭জন। এর মধ্যে বগুড়া সদর ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনে ৪জন। বগুড়া-২( শিবগঞ্জ) আসনে ৩জন। বাকি ৫টি আসনে ৪জন করে ২০জন।
প্রার্থীদের অস্থায়ী নির্বাচনী অফিস থেকে ভোটের দিনের করনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ভোটাররা কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন এবং তাদের ভোটার নাম্বার কত তার ভোটার স্লিপ বাড়ি বাড়ি পৌছে দেয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীর কর্মীরা।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা) আসনে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি আব্দুল মান্নান ও বিএনপি ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম। আসনে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৬৯টি।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ উপজেলা) আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৬জন।
বগুড়া-৩ (আদমদিঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা) এই আসনে বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল মোমিন তালুকদার খোকার স্ত্রী মাছুদা মোমিন প্রার্থী হয়েছেন ধানের শীষের। তার সাথে লড়াই হবে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম তালুকদারের। ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৬৯ জন।
বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা) এ আসনের বর্তমান এমপি জাসদ (ইনু) এর রেজাউল করিম তানসেন লড়ছেন নৌকা প্রতীকে। তার সাথে লড়াই হবে বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেনের। ভোটার সংখ্যা মোট ৩ লাখ ১২ হাজার ৮১ জন।
বগুড়া-৫ (ধুনট ও শেরপুর উপজেলা) এই আসনে লড়ছেন মহাজোটের হয়ে বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান। আর বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৯ জন।
বগুড়া-৬ (বগুড়া সদর) আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন মহজোটের নুরুল ইসলাম ওমর। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এই আসনের এমপি। বগুড়া সদর আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৭৯ জন।
বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা) ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। আবারো এই আসনে মনোনয়ন দাখিল করলে তা বাতিল হয়ে যায়। তার বাতিলের পর বিকল্প প্রার্থী হিসেবে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিলটনকে দেয়া হলেও তারটিও বাতিল হয়ে এখন বিএনপির কোন প্রার্থী থাকছে না। বিএনপির মনোনয়ন স্থগিত হওয়ার কারণে মুলত এখন পর্যন্ত এই আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। এ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান মুহাম্মদ আলতাফ আলী। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম খানের স্ত্রী ফেরদৌস আরা খান, ইসলামী আন্দোলনের শফিকুল ইসলাম, ন্যাপ এর মন্তেজার রহমান, এনপিপির ফজলুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু।