ফুসফুসের অন্যতম শত্রু ধূমপান

ছবি : সংগৃহীত ছবি

স্বাস্থ্য

ফুসফুসের অন্যতম শত্রু ধূমপান

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর, ২০১৮

আমরা জানি, ধূমপানের কুফল হিসেবে ফুসফুসের ক্যানসার, হার্টের রক্তনালি সরু হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ধূমপান একটি মারাত্মক ব্যাধি, অত্যন্ত ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক রোগ। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমান দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ এ ধরনের একটি মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত। এর ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে জানে না এমন লোক খুব কমই আছে। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো :

১. যেসব ঈমানদার ব্যক্তি ধূমপান করে না, একজন ধূমপায়ী তাদের কষ্টের কারণ হয়।

২. ধূমপান অযথা খরচ, এতে দুনিয়া ও আখিরাতের বিন্দু পরিমাণও উপকার হয় না।

৩. ধূমপান মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি বিলোপ করে এবং তা তার নির্বোধ বা জ্ঞানহীন হওয়াকেই বোঝায়। কারণ সে নিশ্চিত জানে যে ধূমপান তার জন্য ক্ষতিকর, তারপরও সে পান করে। এতে তার বোকামিই প্রকাশ পায়।

৪. ধূমপান মানুষের অপমৃত্যু ঘটায়। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, সমগ্র বিশ্বে ধূমপানের কারণে যত বেশি অপমৃত্যুর ঘটন ঘটে, অন্য কোনো রোগব্যাধির কারণে তত বেশি অপমৃত্যু ঘটে না।

৫. ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যানসার, শরীরে তাপ, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি রোগব্যাধি দেখা যায়।

৬. ধূমপানের কারণে কণ্ঠনালিতে ক্যানসার হয়।

৭. ধূমপানের কারণে রক্তনালিগুলো দুর্বল হয় এবং অনেক সময় একজন ধূমপায়ীর রক্তের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

৮. এটি স্মরণশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মনোবল দুর্বল করে দেয়।

৯. ইন্দ্রিয় ক্ষমতা দুর্বল করে; বিশেষ করে ঘ্রাণ নেওয়া এবং স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা লোপ পায়।

১০. অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়।

১১. বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১২. রক্তের উচ্চ চাপের কারণ হয়।

১৩. যৌনশক্তি বিলুপ্ত হয়।

১৪. হজমশক্তি কমায় এবং ধারণক্ষমতা লোপ পায়, আর তার শরীর ঢিলে হয়ে যায়।

১৫. ধূমপানকারীর ঠোঁটে মুখে জিহ্বা গলনালি ইত্যাদিতে ক্যানসার হয়।

১৬. পাকস্থলীতে ক্ষত হতে থাকে। ধূমপানের কারণে যকৃত শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১৭. ধূমপানের কারণে মূত্রথলিতে ক্যানসার হয় এবং মূত্রথলি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। কিডনিতে ক্যানসার হয়।

ধূমপান ত্যাগের উপকারিতা

মনে রাখবেন ধূমপায়ীর শরীরের তাপমাত্রা অধূমপায়ীদের চেয়ে একটু বেশি থাকে এবং ধূমপান ত্যাগের ২০ মিনিটের মধ্যেই আপনি লক্ষ করবেন আপনার তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসা শুরু করেছে, ২০ মিনিটের মধ্য আপনার রক্তের কার্বন মনোক্সাইড (carbon mono oxide) নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের মাত্রা অর্ধেকে নেমে আসে, ২৪ ঘণ্টা ধূমপান থেকে বিরত থাকলে আপনার হূদরোগ (heart attack) হওয়ার ঝুঁকি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ধূমপান ত্যাগের ১৫ দিন থেকে তিন মাসের মধ্যে আপনার ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে এবং শরীরের সর্বত্র রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে,  ধূমপান ত্যাগের এক বছরের মধ্য আপনার হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসবে।

কেউ যদি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ধূমপান ত্যাগ করে তবে তার মস্তিষ্কে স্ট্রোক (brain stroke) হওয়ার ঝুঁকি অধূমপায়ীদের পর্যায়ে নেমে আসবে। ধূমপান ত্যাগের ১০ বছর পর মূত্রথলি, কিডনি ও অন্ত্র, অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসে। ধূমপান ত্যাগের ১৫ বছর পর ফুসফুসের ক্যানসার বা হূদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অধূমপায়ীদের সমপর্যায়ে  নেমে আসে। তাই আপনি যদি এখনো ব্যাপক ধূমপায়ী (massive smoker) হয়ে থাকুন তবে তা থেকে সরে আসুন এবং পুরোপুরি ঝুঁকিহীন স্বাভাবিক জীবনে চলে আসুন।

ত্যাগ করুন ধূমপান

সবার আগে নিজের মন থেকে সব যুক্তি সাজিয়ে নিয়ে সীদ্ধান্ত নিন, মনকে দৃঢ় করুন, ইচ্ছাশক্তি বাড়ান। আপনার ব্যক্তিত্বের শক্তিশালী দিকগুলো নিজের কাছে তুলে ধরুন এবং ঠিক করুন আজ থেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন ধূমপান। বাসায়, ড্রয়ারে বা পকেটে সিগারেট থাকলে তা কোনোরকম দ্বিধা না করে এখনই ফেলে দিন, শুরু হোক আপনার সাহসী পথচলা। অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা নিন, আপনার অধূমপায়ী বা ধূমপানত্যাগী বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে প্রেরণা বা পরামর্শ নিন। ধূমপান ত্যাগের সিদ্ধান্তের প্রাথমিক পর্যায়ে ধূমপায়ীদের সঙ্গ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন কেন ধূমপান ছাড়া আপনার জন্য জরুরি। অর্থাৎ কী কারণে ধূমপান ছাড়তে চান। যেমন ক্যানসার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে। কোনো ধরনের থেরাপি বা বিকল্প মেডিকেশন ছাড়া ধূমপান ত্যাগ ঠিক নয়। কারণ সিগারেটের নিকোটিনের ওপর ব্রেইন অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ছেড়ে দিলেই নানা উপসর্গ শুরু হয়। তাই সিগারেটের বিকল্প থেরাপির কথা চিন্তা করতে হবে।

নিকোটিনের বিকল্প গাম, লজেন্স ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। নিকোটিনের বিকল্প ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। একা একা ধূমপান না ছেড়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্য (যদি ধূমপায়ী থাকেন), বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের উৎসাহিত করে একসঙ্গে ধূমপান ত্যাগের ঘোষণা দিন। মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে হালকা ম্যাসাজ নিন।

অ্যালকোহল পরিহার করুন। মনোযোগ অন্যদিকে নিতে ঘরের কাজ করতে চেষ্টা করুন। ধূমপান ত্যাগের জন্য বার বার চেষ্টা করুন। একবার ছেড়ে দিলে দ্বিতীয়বার আর ধূমপান করবেন না। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। প্রচুর পরিমাণ সবুজ শাক-সবজি ও রঙিন ফলমূল খান।

ধূমপান বন্ধ করে যে আর্থিক সাশ্রয় আপনার হবে তার একটা অংশ জনকল্যাণ অথবা হালকা বিনোদনে ব্যয় করুন। আর ধূমপান ছাড়ুন বন্ধু-বান্ধব বা প্রেমিক-প্রেমিকাকে খুশি করার জন্য নয়, বরং আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যই এটা করছেন।

* ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলোর লম্বা একটি তালিকা চোখের সামনেই রাখার ব্যবস্থা করুন।

* ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করুন এবং না করার ব্যাপারে নিজেকে উৎসাহিত করুন।

* ঠিক কোন কোন সময় আপনি ধূমপান করেন এবং তখন আপনি কী করেন সেটি নোট করুন।

* সিগারেটের বদলে বাদাম, চকোলেট, চুইংগাম এগুলো খেতে পারেন।

* মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে হালকা ম্যাসাজ নিন।

* সিগারেট না কেনার কারণে প্রতিদিন যে টাকা জমবে তা একটি কাচের পাত্রে রাখুন, যাতে টাকাগুলো বাইরে থেকে দেখা যায়। এক মাস পর ওই টাকায় নিজেকেই সুন্দর কিছু উপহার দিন।

* সিগারেট টানার সময় হলেই অন্যকিছুতে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন।

* গান শুনুন, কম্পিউটারে গেম খেলুন অথবা বাগানে নতুন কোনো গাছ লাগান।

* অতিথি কিংবা সবার বেলাতেই বাড়িতে ধূমপান নিষিদ্ধ করুন।

* নিজের অগ্রগতির প্রশংসা করুন এবং নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে আরো স্থির হোন।

* ধূমপানের বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে তুলুন, অবশ্যই সফল হবেন।

* নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

* প্রচুর পরিমাণ শাকসবজি ও ফল খান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads