’ফারজানা বীথি
ছোটবেলা থেকেই নতুন নতুন জিনিস তৈরির প্রতি ঝোঁক ছিল ফারিহা ফারজানার। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। সাধারণ একটি জিনিসকে হাতের কাছে থাকা ছোটখাটো উপকরণ দিয়ে নতুন রূপ দিতে বেশ আনন্দ পেত। সাধারণকে অসাধারণ করে তোলার তার এই গুণটি প্রশংসিত হতো পরিবারসহ বন্ধু মহলেও। সবার অনুপ্রেরণায় দু’বছর আগে ফারিহা তার হস্তশিল্পগুলো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বানাতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড়আপুর কাছে প্রথম একটি চাবির রিং বিক্রির মাধ্যমেই ক্যাম্পাসে তার তৈরি জিনিসগুলো বিক্রি শুরু হয়। এরপর বানানো শুরু করেন ছোট ছোট আরো কিছু জিনিস। প্রথম দিকে বিভিন্ন ধরনের আয়নায় ডেকোরেশন করতে থাকেন। এরপর হিজাব পিন, গহনার বাক্স, পহেলা বৈশাখ বা ফাল্গুনে পুঁতির তৈরি গহনা ইত্যাদি তৈরি শুরু করেন। এর সূত্র ধরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে কাজের অর্ডার আসতে থাকে বলে জানান ফারজানা। পড়াশোনার পাশাপাশি হস্তশিল্পের এই কাজটি বেশ উপভোগ করেন তিনি। ক্রিয়েটিভ স্পার্ক নামে অনলাইনে চলছে তার এই হস্তশিল্পের ক্ষুদ্র ব্যবসা। ফারিহার হস্তশিল্পের এই কাজগুলো ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। বিভিন্ন উৎসব পার্বণ, যেমন- পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনে ডিপার্টমেন্টের বড় আপু বা বন্ধুদের কাছ থেকে গহনা তৈরির অর্ডার পান। এ ছাড়া তার তৈরি হিজাব পিনগুলোও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করতে স্বস্ফুর্তভাবে তার সঙ্গে কাজ করছে তারই কিছু বন্ধবান্ধব।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই মূলত ব্যবসায়িকভাবে হস্তশিল্পের কাজগুলো করতে থাকেন তিনি। নিজের জমানো টাকা দিয়েই সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহার করে বিভিন্ন জিনিস বানাতে শুরু করেন। এখন ব্যবসা থেকে যে আয় করেন তাতে নিজের হাতখরচ চালাতে পারেন বেশ। ফারিহার ইচ্ছা, যেসব মেয়ে নানা ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করতে পারে তাদের নিয়ে কাজ করা, তারা যাতে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে নিজের খরচ জোগাতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা এবং স্বপ্ন দেখেন ‘ক্রিয়েটিভ স্পার্ক’কে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এই ছোট্ট কাজের মাধ্যমে তিনি যে অর্থ উপার্জন করেন, তার একটি অংশ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা, অর্জিত অর্থ দিয়ে একটি চ্যারিটি সংস্থা খুলবেন, যার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষের স্থায়ী সমস্যা সমাধানের কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে তার হাতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা বেশ বেড়েছে। পড়ালেখার চাপ থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। অবসর পেলে কাজের পাশাপাশি গান শুনতে ভালো লাগে তার। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে এবং অনলাইন ব্যবসার প্লাটফর্মের পাশাপাশি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে তার হস্তশিল্পের কাজ। একদিন তার প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ের মতো নামি একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে।