মানুষ বাড়ছে। বাড়তি মানুষের জন্য দরকার হচ্ছে বাড়তি খাবার উৎপাদনের। আর সেটি করতে গিয়েই পৃথিবীর সব দেশ পড়ছে চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ প্রায় দেশেরই কৃষি উৎপাদন খাতে রয়েছে ব্যাপক শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে খরচের বহর। তবে প্রযুক্তির বিকাশের এই কালে এসব সমস্যা মোকাবেলায় প্রযুক্তিই হতে পারে ভরসা। ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কৃষি খাত বেশ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আর প্রযুক্তি নির্ভরতায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে রোবটিকস।
জমি চাষ দেওয়া, বীজ বপন করা, আগাছা নিড়ানি দেওয়া, কীটনাশক ছিটানো, ফসল তোলাসহ সব কাজই এখন সহজে করে দিচ্ছে রোবট বা যন্ত্রমানব।
কিছু দিন আগে ফসলের আগাছা শনাক্ত করা ও কীটনাশক দিয়ে সেই আগাছা ধ্বংস করতে সক্ষম এমন একটি রোবট আবিষ্কার করেন সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা। সৌরশক্তি চালিত এ রোবটে আছে ক্যামেরা। ক্যামেরার সাহায্যে রোবটটি আগাছা খুঁজে বের করে। তারপর সেটিকে নিজের ভেতর থাকা এক ধরনের নীল তরল দিয়ে ধ্বংস করে ফেলে।
আবার বিশ্বের কিছু উন্নত দেশে কারখানার পর ফসল তোলার কাজেও রোবট ব্যবহারের উদ্যোগ চলছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রোবটকে দিয়ে ফসল তোলার কাজ করিয়েছেন গবেষকরা।
এছাড়া জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে লেটুস শিল্পে রোবট ব্যবহার করতে শুরু করেছেন গবেষকরা। দেশ দুটির কয়েকটি গবেষণা কেন্দ্রে লেটুস শিল্পে ক্ষেতে ফসল উৎপাদন, কর্তন থেকে শুরু করে মোড়কীকরণ পর্যন্ত সব কাজেই ব্যবহার হচ্ছে রোবট।
লেটুস পাতার মতো এবার মানুষের সাহায্য ছাড়াই পুরোপুরিভাবে দানাদার শস্যও ফলাচ্ছে স্বয়ংক্রিয় রোবট। হ্যান্ডস ফ্রি হেক্টর (এইচএফএইচ) নামে যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানি প্রমাণ করেছে যে, রোবট কোনো মানুষের সাহায্য ছাড়াই পুরোপুরিভাবে শস্য ফলাতে সক্ষম।
স্বয়ংক্রিয় যান ও ড্রোন দিয়ে তারা শীতকালীন গম ও বার্লি ফলনে সফলতা পেয়েছেন। হ্যান্ডস ফ্রি হেক্টর কোম্পানি শস্য রোপণ থেকে শুরু করে এর পর্যবেক্ষণ, প্রতিপালন ও চূড়ান্তভাবে ফসল কাটার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মাঠে একজন মানুষের আগমন ছাড়াই গম ও বার্লি ফলনে কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
হ্যান্ডস ফ্রি হেক্টরের গবেষক মার্টিন অ্যাবেল বলেন, আমরা মানুষকে দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে, খুব দূর ভবিষ্যৎ নয় এটি এখনই সম্ভব।
তিনি জানান, এর মাধ্যমে তারা কৃষিকাজকে আরো অগ্রগামী চিন্তার ক্ষেত্র হিসেবে ভাবার উপলব্ধি এনে দিয়েছেন। এর ফলে মানুষ এক্ষেত্রে যোগদান করতে আকৃষ্ট হবে।
এইচএফএইচের সম্পাদিত কাজসহ কৃষিকর্মের প্রায় সব কাজই রোবটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব, এমনকি রোগ শনাক্তকরণ ও আগাছামুক্তকরণও।
এইচএফএইচের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলেও দিনের সময় ও আবহাওয়া এখনো বড় প্রতিবন্ধক, যার জন্য স্বয়ংক্রিয়তা এখনো পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বৃষ্টির সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রাক্টরের জন্য সোজা লাইন বজায় রেখে চলা কষ্টকর।
এইচএফএইচের গবেষণার মেকাট্রনিক্স গবেষক জনাথন গ্রিল এক প্রেস রিলিজে বলেন, এই প্রযুক্তিটির উন্নতি ঘটাতে এটি এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নতুন প্রতিভাকে গ্রহণ করবে। আমরা আশা করছি, এই প্রকল্পটি মানুষকে উৎসাহ দেবে এবং তাদেরকে কৃষিক্ষেত্রে কিছু বিরল ও মজার কাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।