পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য জাতির মধ্যে পরস্পর সাক্ষাতের সময় সদিচ্ছা বা সম্প্রীতি প্রকাশার্থে নিজ নিজ রুচি ও সংস্কৃতি অনুসারে স্বাগত-সম্ভাষণের রীতি প্রচলিত রয়েছে। আর তাদের সম্ভাষণের প্রকাশভঙ্গি এবং বাক্যালাপ ভিন্ন ভিন্ন। গোষ্ঠীগত দিক দিয়ে সবার আলাদা সংস্কৃতিও রয়েছে। ইসলামপূর্ব যুগে আরবদের মধ্যে পরস্পর দেখা হলে ‘হাইয়্যাকাল্লাহ’ বলে সালাম করার রীতি প্রচলন ছিল, যার অর্থ ‘আল্লাহ তোমাকে জীবিত রাখুন’। ইসলাম আবির্ভাবের পর ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার রীতি প্রচলন করা হয়। এটি কেবল একটি স্বাগত সম্ভাষণই নয়, বরং একটা দোয়াও বটে- যার অর্থ তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম মানুষকে সালাম শিক্ষা দিয়েছেন। তিরমিজি শরীফে বর্ণিত আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা প্রথমে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে বললেন, ‘যাও অবস্থানরত ফেরেশতার ওই দলকে সালাম কর। তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয় তা শ্রবণ কর।’ তখন তিনি বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ তার উত্তরে ফেরেশতারা বললেন, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ সেই থেকে মুসলমানের মধ্যে সালামের রীতি প্রচলন শুরু হয়। রসুল (সা.) মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে সালাম বিনিময় করার প্রতি খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং এটাকে সর্বোত্তম কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিস শরীফে সালাম আদান-প্রদানের ফজিলত, বরকত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্নভাবে উল্লেখ আছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘সালাম আল্লাহতায়ালার অন্যতম নাম, যা তিনি পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। কাজেই তোমরা পরস্পরে ব্যাপকভাবে সালাম কর। কেননা মুসলমান যখন কোনো মজলিসে উপস্থিত হয়ে সালাম করে, তখন সে আল্লাহর কাছে একটি উচ্চ মর্যাদা লাভ করে। কারণ সে সবাইকে সালাম অর্থাৎ আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মজলিসের লোকেরা যদি সালামের উত্তর না দেয়, তাহলে তাদের থেকে উত্তম ব্যক্তিরা সালামের জবাব দেবে, অর্থাৎ ফেরেশতারা।’ (তিবরানি শরীফ) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুমিন না হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং পরস্পর একে অন্যকে মহব্বত না করে তোমরা প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না। আমি তোমাদের একটি কাজের কথা বলে দিচ্ছি, তোমরা যদি এটি বাস্তবায়ন কর, তবে তোমাদের মধ্যে মহব্বত সৃষ্টি হবে। আর তা এই যে, পরস্পরের মধ্যে সালামের রীতিকে ব্যাপকতর কর, অর্থাৎ প্রত্যেক পরিচিত ও অপরিচিত মুসলমানকে সালাম কর।’ (মুসলিম শরীফ)। অপর এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘তুমি মানুষকে আহার করাও এবং পরিচিত হোক কিংবা অপরিচিত সবাইকে সালাম কর।’ (বোখারি শরীফ)।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া রসুলপুর, ঢাকা