অনিয়ম ও হয়রানি থেকে গ্রাহকদের রেহাই দিতেই চালু করা হয় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার। কিন্তু সেই প্রি-পেইডেই এখন ভোগান্তি বেড়েছে গ্রাহকদের। সেই সঙ্গে বিভিন্ন চার্জের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এ ছাড়া প্রি-পেইড মিটারের সার্ভার ত্রুটির কারণে টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে- এমন অহরহ অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের গ্রাহকদের।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক মিলে গ্রাহকসংখ্যা প্রায় নয় লাখ। এর মধ্যে ২ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আরো ১ লাখ ২০ হাজার বিদ্যুৎ সংযোগে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
এদিকে বিদ্যুৎ চুরি, অবাঞ্ছিত বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংকে বিল পরিশোধে ভোগান্তি ইত্যাদি দূর, গ্রাহক সেবার মান বাড়ানো এবং এ খাতে শতভাগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে প্রি-পেইড মিটার চালু করা হলেও তাতে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে। প্রি-পেইড কার্ড রিচার্জের জন্য পিডিবির পর্যাপ্ত ভেন্ডিং স্টেশন না থাকায় এক্ষেত্রে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ভেন্ডিং স্টেশনগুলোতে প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন পড়ছে কার্ড রিচার্জের জন্য। সম্প্রতি মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির ডিলারের মাধ্যমে রিচার্জের সুবিধা চালু করা হলেও সেখান থেকে রিচার্জ করতে গিয়ে প্রায়ই সার্ভার সমস্যার শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা। অনেক সময় রিচার্জকৃত টাকা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।
নগরীর লালখানবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র সানি বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নগরীর ওয়াসা এলাকার একটি গ্রামীণফোন ডিলার থেকে ২১ এপ্রিল এক হাজার টাকা রিচার্জ করেন তিনি। কিন্তু দেখা যায় তার কার্ডে জমা হয়েছে মাত্র ১৩১ টাকা। বিষয়টি ওই ডিলারকে জানানোর পর তিনি বলেন, তারা সঠিকভাবে রিচার্জ করেছেন, সার্ভারের কারণে সমস্যা হয়েছে। এরপর তিনি ছুটে গেলেন ষোলশহরের বেবি সুপার মার্কেটের কাছে পিডিবি অফিসে। সেখানকার কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক দফা ধরনা দিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি তাদের কাছ থেকে। ফেরত পাননি বেহাত হয়ে যাওয়া টাকা।
নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিত বড়ুয়া বলেন, অপর্যাপ্ত ভেন্ডিং স্টেশন এবং সার্ভার সমস্যার কারণে প্রায়ই প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিছুদিন আগে কার্ডের টাকা শেষ হওয়ার পর গ্রামীণ ফোন ডিলারের কাছ থেকে রিচার্জ করা টাকা জমা হতে সময় লেগেছে ২৪ ঘণ্টা। পিডিবির সার্ভার সমস্যার কারণে এমন ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অনেক গ্রাহককেই কাটাতে হয় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়।
চট্টগ্রামে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রি-পেইড কার্ড রিচার্জের জন্য ৯টি ভেন্ডিং স্টেশন রয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির মাধ্যমেও রিচার্জের সুবিধা রাখা হয়েছে। সার্ভারের কারিগরি ত্রুটির কারণে যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মিটার চার্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যতদিন প্রি-পেইড কানেকশন থাকবে ততদিন প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে মিটার চার্জ কাটা হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মিটারগুলোর মেয়াদ হচ্ছে ১০ বছর। আর যে হারে মিটার চার্জ কাটা হচ্ছে তাতে মিটারের পুরো দাম আদায়ে সময় লাগবে ১২ বছর। তার আগেই নতুন করে মিটার সরবরাহ করতে হবে পিডিবিকে। রিচার্জকৃত অর্থের চেয়ে কম রিচার্জ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। সার্ভার ত্রুটির কারণে যদি এটি হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী সময়ে এটা সমন্বয় হয়ে যাবে।