জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্য বর্ধিতকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে) সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সৌদি সরকারের আর্থিক সহায়তায় বায়তুল মোকাররম কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বায়তুল মোকাররম মসজিদে নির্মিত স্থাপনার শুভ উদ্বোধন করেন। মসজিদটিতে পূর্বে কোনো মিনার ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে একটি মিনার তৈরির কাজ শুরু করেন। মিনারটির ভিত্তি নির্মাণের পর পরবর্তী সরকার এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এরপর আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি নতুন করে মসজিদের মিনার তৈরির কার্যক্রম হাতে নেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে ১৭০ ফুট মিনার নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও বর্তমান সরকারের আমলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ সাহান সম্প্রসারণসহ মুসলিম স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী আর্চ স্থাপন ও প্রবেশ তোরণ নির্মাণ করা হয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদে মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য সুবিস্তৃত কোনো স্থান ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ৫ হাজার ৬০০ মহিলার একত্রে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রেখে মহিলা নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সাহানে ২০ হাজার মুসল্লির নামাজের স্থান সম্প্রসারণসহ মসজিদের আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫০০ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও মসজিদের অজুখানা ও বাথরুমও সংস্কার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমপ্লেক্সে পাঁচ তলাবিশিষ্ট ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি নির্মাণ করা হয় এবং লাইব্রেরিতে নতুন নতুন ধর্মীয় কিতাবাদি সংযোজন করা হয়। একই সঙ্গে লাইব্রেরিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত গবেষণা কক্ষ, পাঠকক্ষ, শিশু পাঠকক্ষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক পাঠকক্ষের ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগেই বায়তুল মোকাররম মসজিদে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
মসজিদ নিয়ে কয়েকজন মুসল্লি যা বললেন...
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে বহু মুসল্লি আসেন। এ ছাড়া আশপাশে যারা থাকেন তারা নিয়মিতই এই মসজিদে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন এমন কয়েকজন মুসল্লির সঙ্গে মসজিদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। তাদের বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো-
পাইকারি আতর ও টুপি বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম। বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়েন তিনি। আরিফ বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে পারি এই জন্য আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু মসজিদের বেশ কিছু সমস্যা আছে। যে বিষয়গুলোর প্রতি কেউই দৃষ্টি দেয় না। একটি বড় সমস্যা হলো— বাথরুমের অপ্রতুলতা। আগত মুসল্লিদের তুলনায় বাথরুমের সংখ্যা অনেক কম। তা ছাড়া বাথরুমগুলো বেশিরভাগ সময়েই নোংরা থাকে বলে অনেকেই ব্যবহার করতে পারেন না। এই বিষয়টির প্রতি আমি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে গাড়ি পাকিংয়ের যথেষ্ঠ ব্যবস্থা নেই। অল্প সংখ্যক গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মুসলিম দেশের জাতীয় মসজিদগুলোতে অনেক বেশি গাড়ি পাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকে।’
ব্যবসায়ী মো. তাহের হোসেন জানান, ‘আমি অনেক আগে থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পাশে ইসলামী প্রডাক্টের ব্যবসা করি। বায়তুল মোকাররম প্রথমত জাতীয় মসজিদ। এ ছাড়াও এই মসজিদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তাই আমি নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। এই মসজিদে একসময় নামাজ পড়তে অনেক ভালো লাগত। কিন্তু কেন জানি এখন নামাজ পড়ে আর আগের মতো তৃপ্তি পাই না।’
বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন একটি দোকানে চাকরি করেন শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়েই বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়তে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু নামাজ পড়তে আসার সুযোগ সবসময় পাই না। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, যা আমার খুবই ভালো লাগে। সেই অনুষ্ঠান থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি। বর্তমানে হজের প্রশিক্ষণ চলছে। আর এ জন্যই আমি এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসি।’
প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাসা মিরপুরে। সেখান থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দূরত্ব অনেক বেশি হলেও প্রায় শুক্রবারই জুমার নামাজ এই মসজিদে আদায়ের চেষ্টা করি। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এদিকে আসা হলে বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজও এখানে আদায় করি। এ ছাড়া সময় করে মসজিদের পাশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে থাকা নানান ভাষার বই ও পত্রিকা পাঠের সুযোগ সত্যিই ভালো একটি দিক। তবে মসজিদের গ্রাউন্ডফ্লোরে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দোকান বা মার্কেট রয়েছে। এটা একটু দৃষ্টিকটু লাগে। মসজিদের নীচে ধর্মীয় পণ্য বা ইসলামী বইয়ের বৃহৎ মার্কেট রাখা হলে ভালো হতো।’