প্রথম দিনেই মহাসড়কে দুর্ভোগ

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জ্যমের চিত্র

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

ঈদে বাড়ি ফেরা

প্রথম দিনেই মহাসড়কে দুর্ভোগ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ অগাস্ট, ২০১৮

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ অংশে চলমান যানজট পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ঈদযাত্রার শুরুতে গতকাল শুক্রবারও এই রুটে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। এ দিন পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে নাব্য ও ফেরি সঙ্কটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। এই পথের গাড়িগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট ব্যবহার করায় ফেরিঘাটে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার দিন ধরে যানজট অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট ছিল। চার লেনের মহাসড়ক থেকে দুই লেনের মেঘনা-গোমতী সেতু ও মেঘনা সেতু এলাকায় গাড়ি এসে আটকে থাকায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর ওপর রয়েছে ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রী ও পশুবাহী পরিবহনের অতিরিক্ত চাপ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দাউদকান্দির যানজটে তিন ঘণ্টা বসে ছিলাম। আমাদের মতো হাজারো যাত্রী পথে আটকে দুর্ভোগে পড়েছেন।’ দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, রাত ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবের চরে মহাসড়কে একটি ট্রাক উল্টে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনা-কবলিত ট্রাকটি সরিয়ে নেয়। দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ দিন বিকালের দিকে কুমিল্লা অংশের যানজট কমে আসে বলেও জানান তিনি।

চালকদের অভিযোগ, গরু-ছাগলসহ পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ থামিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা চাঁদা আদায় করায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা যানজট নিরসনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’

গাজীপুর : জেলার সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে সাত ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অ্যালিগেন্স গ্রুপের তিনটি কারখানার শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, মহাসড়ক অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় সড়কের উভয় পাশের ২৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী।

মাদারীপুর : শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কটে গত এক সপ্তাহ ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের এই রুটটি প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। পণ্য পরিবাহী যানগুলো অন্য রুটে চলাচল ও যাত্রীরা লঞ্চে যাতায়াত করছেন। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বাতাসের প্রবাহ বেড়ে পদ্মা কিছুটা উত্তাল হওয়ায় লঞ্চ চলাচলও কমে গেছে। রাত ১০টা থেকে ফেরি চলাচল ফের বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে চারটি কে-টাইপ ও তিনটি মিডিয়াম ফেরি চলাচল শুরু করেছে। নৌরুট সচল রাখতে সাতটি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ অব্যাহত রয়েছে।

কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মিয়া জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সসহ ছোট গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। তবে উভয় ঘাটেই পরিবহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ী লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আক্তার হোসেন বলেন, পদ্মায় কিছুটা ঢেউ থাকলেও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীদের চাপ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

মানিকগঞ্জ : শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের যানবাহনের বাড়তি চাপ আর তীব্র স্রোতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হলেও কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনগুলোকে ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

যাত্রী ও চালকরা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে কয়েক দিন ধরে পারাপারে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পাটুরিয়া ঘাটে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এবং দৌলতদিয়া ঘাটে তিন থেকে চার ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। বাস, গরুর ট্রাকসহ সব যানবাহনকে একই লাইনে ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকতে হয় বলে সময় বেশি লাগছে দৌলতদিয়া ঘাটে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ম্যানেজার (মেরিন) আবদুস সাত্তার জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের অনেক যানবাহন বিকল্প পথ হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ফেরি পারাপারে আগের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ সময় বেশি লাগছে। ফলে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এ ছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার করতে গিয়ে যানবাহনগুলোর পার হতে সময় লাগছে বেশি।

পাটুরিয়া ঘাটে দায়িত্বপালনকারী জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর গোলাম আম্বিয়া জানান, ঈদের সময় যানবাহনের চাপ আরো বাড়লে অপেক্ষমাণ গাড়ির সারি দীর্ঘ হবে। পরে এসে আগে যাওয়া কিংবা এলোপাতাড়িভাবে যানবাহন রাখার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। যানজট নিরসনে তারা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads