প্রতিশ্রুতি আর অভিযোগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নির্বাচন

প্রচারণার শেষ দিন

প্রতিশ্রুতি আর অভিযোগ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শেষ সময় কাগজে-কলমে আজ শুক্রবার সকাল ৮টা হলেও গতকালই ছিল মূলত শেষ দিন। তাই দিনভরই প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। এক দলের বিরুদ্ধে আরেক দলের অভিযোগেরও কমতি ছিল না সে সময়। ঘটছে হামলা-মামলার ঘটনাও। ছিল কিছু নাটকীয়তাও।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের প্রার্থীরা মাঠে নামেন। লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও উঠান বৈঠকসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচারণায় ব্যস্ত দিন পার করেছেন প্রার্থীরা। তবে মাঠে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থীদের যতটা উপস্থিতি ছিল তার সিকিভাগও ছিল না ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের। নেতাকর্মী গ্রেফতার ও প্রচারে বাধার অভিযোগ তুলে এই জোটের বেশিরভাগ প্রার্থীই সমাবেশ বা মিছিল থেকে বিরত থেকেছেন।

প্রচারের শেষ দিন ঢাকায় সুধা সদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, যশোর, পাবনা ও পঞ্চগড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নিরাপদে থাকবেন। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত মিলে ১ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪৪১ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ১৭০টা অফিস-বাড়িঘর তারা ভাঙচুর করেছে, ৫৪টা স্থানে বোমা হামলা করেছে। ৬৮টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের এই চরিত্রটা বদলাতে হবে। কারণ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মানুষ কখনো পছন্দ করে না। কখনো পছন্দ করবে না। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

এদিকে প্রচারণার শেষ দিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বর যেমন বিজয় অর্জন করেছি ৩০ ডিসেম্বরও আমরা বিজয়ী হব। এটা কোনো দলের বিজয় নয়, এটি সবার বিজয়। দলীয়করণ মানে জমিদারি, ভোট দিয়ে এ থেকে মুক্ত হব। ধানের শীষে ভোট দিলে এ থেকে মুক্ত হবেন।

চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে পরশু দেশে ফেরা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদও নিজ বাসায় বসেই চালিয়েছেন প্রচারণা। সেখানে তিনি শেখ হাসিনাকে বোন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, জাতীয় পার্টির উন্মুক্ত আসনের প্রার্থীরা মহাজোটকে সমর্থন করবেন। তিনি নিজেও ঢাকা-১৭ আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে সমর্থন জানিয়েছেন। এরশাদ বলেন, ১৪৬টি আসনে দলের উন্মুক্ত প্রার্থীরা মহাজোটকে সমর্থন জানাবেন। তবে যেসব জায়গায় জেতার মতো অবস্থায় আছেন, সেখান থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে না।

সারা দেশের সব আসনেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীদের প্রচারণায় ছিল উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ মিছিল, গণসংযোগ আর ছোট ছোট সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শেষ করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারণায় ঘটেছে কিছু দুর্ঘটনাও। ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের প্রচারণায় গিয়ে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজার নিরাপত্তার দায়িত্বরত অবস্থায় হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। ওই পুলিশের আকস্মিক মৃত্যুতে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করেন মাশরাফি।

কিছু প্রচারণা চালিয়েছে ঐক্যফ্রন্টও। ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী, ঢাকা-৯ আসনে আফরোজা আব্বাস, রাজশাহী-২ আসনের প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু, রংপুর-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার, খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রচারণায় নামেন।  সিলেট, হবিগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের নানা প্রান্তে প্রচারণায় নেমেছেন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা। এ সময় ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটের দিন সকাল থেকেই কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তারা। এই জোটের অনেক প্রার্থী মোবাইল ফোনে ও ফেসবুকেও প্রচারণায় চালিয়েছেন।

কারাবন্দি ছেলেকে মুক্ত করতে মোবাইল মেসেজে ধানের শীষে ভোট চেয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের বিএনপিপ্রার্থী শাহাদাত হোসেনের মা শায়েস্তা খানম। চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিএনপি প্রার্থী নোমান ফেসবুকে ভোট চেয়েছেন শেষ দিন।

এছাড়া গত ৪ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিরোধী দল বিএনপির ৯ হাজার ২০০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একই সময়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৮০৬টি গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২২ দিনে সারা দেশে ২ হাজার ৭১৬ হামলার ঘটনায় বিএনপি এবং বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১২ হাজার ৫৮৮ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নির্বাচনী হামলায় অন্তত আটজন বিরোধীদলীয় কর্মী নিহত হয়েছেন।

ভোটের প্রচারের শেষ দিন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে গণসংযোগ করেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচার চালান তিনি।

এদিকে শেষ দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যাতে সহিংসতা, দমনপীড়ন ও বলপ্রয়োগহীন একটি পরিবেশে হতে পারে, সব পক্ষকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সংখ্যালঘু, নারীসহ বাংলাদেশের সব নাগরিক যাতে নিরাপদ পরিবেশে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিতে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও একই আহ্বান জানিয়েছে প্রচারণার শেষ দিনে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads