একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তালিকায় আরো পরিবর্তন হতে পারে। মনোনয়নবঞ্চিত কয়েক নেতার ‘ক্ষোভ’ দমাতে শেষ পর্যন্ত তাদের দলের প্রার্থী করা হতে পারে। মনোনয়নের চিঠি পেলেও জোট-মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও প্রতিপক্ষের প্রার্থী বিবেচনায় কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও বাদ পড়তে পারেন। দলের নীতিনির্ধারক ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২৩০টি সংসদীয় আসনে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হলেও প্রয়োজনে প্রার্থীর ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে। এ কারণে মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার সঙ্গে প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের স্বাক্ষর সংবলিত সম্মতিপত্রও রাখা হয়েছে। যেসব আসনে দুজন প্রার্থীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোয় আরেকবার ‘জরিপের’ মাধ্যমে জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দলের প্রার্থী করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত রোববার প্রার্থীদের চিঠি দেওয়ার পরও গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের টিকেটে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। বিশেষ কৌশলের কারণে তালিকা প্রকাশ করতে সময় নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত তালিকায় আরো কিছু পরিবর্তন হতে পারে। মহাজোটের শরিক দলের মনোনয়নবঞ্চিত হলে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে প্রার্থী হওয়ার সময় না পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও দল ভাবছে। তারা বলেন, মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার পর থেকে নেত্রকোনা, ফরিদপুর, জামালপুর, ঝালকাঠি ও কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকরা। তাই গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
কোনো আসনে প্রতিপক্ষের প্রার্থী কে তা জানার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। প্রতিপক্ষের প্রার্থী শক্তিশালী হলে কোনো কোনো আসনে জরিপের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন বিবেচনায় প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ভোটের মাঠে সবদিক থেকে মোকাবেলা করে জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনেক আসনে প্রার্থী দিতে চায় ক্ষমতাসীন এ দল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মনোনীত প্রার্থী বিবেচনায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী বদল হতে পারে বলে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এবার দশটি আসনে মনোনয়ন প্রার্থী দুজনকে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রার্থিতা নিয়ে সমস্যা থাকায় এসব আসনে বাছাই শেষে দুজন করে মনোনয়ন দিয়েছে দল। যেসব আসনে দুজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেসব আসনে শেষ মুহূর্তে আরো একটি মাঠ জরিপ করে জনপ্রিয়তা যাচাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন না পেয়ে প্রভাবশালী নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন বলে দলটির কাছে তথ্য আছে। এ বিষয়েও আওয়ামী লীগ চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করছে। ফলে মনোনয়নপ্রাপ্তদের চিঠি দেওয়ার পরদিন ঘোষণা থাকলেও দলের ও মহাজোটের প্রার্থী ও আসন তালিকা প্রকাশ করেনি আওয়ামী লীগ। তবে বিতর্কিত ও জনপ্রিয়তাহীন নেতাদের আওয়ামী লীগে না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে দলটির।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আমাদের সভানেত্রীর একটু সবুজ সঙ্কেত পেলেই সারা দেশে বিএনপির বিপুল নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ অভিমুখে যাত্রা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে কাদের
গতকাল বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিপক্ষের কৌশলও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা কৌশলে মার খেতে চাই না, এগিয়ে যেতে হবে। আমরা কারো থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না।’ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তা স্থগিত করায় ও বাকি প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা না করায় সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, কৌশলগত কারণে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। আরো যাচাই-বাছাইয়ের পর এ তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনী কৌশলকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। মনোনয়নের নামে বানরের পিঠা ভাগ করতে চায় না আওয়ামী লীগ। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বড় দল হিসেবে জাতীয় পার্টি বেশি আসন পাবে।