পোশাক রপ্তানি আয় ছাড়াল ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলার

সংগৃহীত ছবি

আমদানি-রফতানি

পোশাক রপ্তানি আয় ছাড়াল ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৫ নভেম্বর, ২০২০

করোনাকালেও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১ হাজার ৪৫ কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়েছে। করোনার শুরুতে তলানিতে নেমে যাওয়া রপ্তানি আয় এখন প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়াচ্ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় করেছে। এই চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ হিসাবেই জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ।

সর্বশেষ অক্টোবর মাসে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এই চার মাসে ১ হাজার ৫৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৫৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫৮০ কোটি ১৮ লাখ ডলার।

অপরদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এই চার মাসে নিট পোশাক রপ্তানিতে ৪ দশমিক শূন্য ৭৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যতটা ভয় পেয়েছিলাম, তা এই তিন মাসে কেটে গেছে। এখন আমরা সাহস পাচ্ছি। শ্রমিকদের বেতন দিতে সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, তাতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। সব মিলিয়ে ছয় মাস-এক বছরের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব বলে আশা করছি।’ করোনাভাইরাস মহামারউতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছিল; ওই মাসে সব মিলিয়ে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি ডলার।

বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ে, জুনে তার চেয়ে অনেক বাড়ে। এরপর নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৫৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। জুলাই মাসের ওই আয়ের মধ্য দিয়ে সাত মাস পর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখানে একটি বিষয় কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখতে হবে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু আমাদের রপ্তানি আয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল। প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি কমছিল। তিন মাসে আড়াই শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মহামারির সময় প্রবৃদ্ধি থাকাই বড় বিষয়। এই সংকটেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির বড় প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশের মতো। মহামারিকালে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ১০৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ০১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারউর এই সময়ে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০) মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ছিল ২৬ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads