বর্তমান সরকার যেসব জনকল্যাণকর কাজ করেছে, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো- শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পুনরায় পেনশনে ফিরিয়ে আনা। তারা কি জানতেন বিক্রি করে দেওয়া পেনশন আবার তারা ফিরে পাবেন? নিশ্চয়ই না। ভাবতেও পারেননি আকাশের চাঁদ হাতের নাগালে পাবেন। অধিকাংশ সমর্পণকারী যেখানে সংসারে বোঝা হয়ে পড়েছেন, তাদের মুখে একটু হাসি ফুটতে শুরু করেছে। পাড়ায় পাড়ায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে— অমুক বিক্রি করে দেওয়া পেনশন আবার ফিরে পাবেন। সত্যি, এটা অভাবনীয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা একদিন বাতি জ্বালিয়েছেন, এখন তাদের অনেকেরই জীবন কাটছে অন্ধকারে। আর সেই অন্ধকারে আবার আলো জ্বলবে, সেটা কি কম সৌভাগ্যের কথা! কেউ কেউ এ বয়সে আবার হতে পারবেন আলোকবর্তিকা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য। এই পেনশন ফিরে পাওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর মতো ভাষাও তাদের নেই- হয়ে পড়েছেন নির্বাক, ঝরছে আনন্দ-অশ্রু।
এটা তো গেল একদিককার প্রতিক্রিয়া, যারা ২০১৭ সালের ১ জুলাই ১৫ বছরে অবসর গ্রহণ করেছেন। বাকিদের প্রতিক্রিয়ায় তারাও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন, তবে একটি জায়গায় ভারাক্রান্ত হয়ে সহমত প্রকাশ করতে পারছেন না। সেটা হলো অবসরের বয়স। কারণ তারাও অবহেলিত এবং পরিবারের কাছে বোঝা। তাদের প্রত্যাশা অবসরের বয়স ১০ বছর হলে আরো কিছুসংখ্যক লোক আলোর মুখ দেখতেন। এই যুক্তির প্রতি সমর্থন দেখিয়ে অঙ্ক কষে দেখাচ্ছেন- ১৫ হাজার টাকা বেতনে অবসর গ্রহণ করলে পঞ্চাশ শতাংশ সমর্পণ করার পর প্রতিমাসে পেনশন পাবেন ৬ হাজার টাকা। আর শতভাগ পেনশন সমর্পণ করলে সরকারের কাছ থেকে এককালীন অতিরিক্ত পেয়েছেন ৬ লাখ টাকা, যা ১০০ মাস বা ৮ বছর ৪ মাসের পেনশনের সমান। অর্থাৎ ১০ বছর অবসর গ্রহণ করার আগেই ওই টাকা পরিশোধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদের দাবি অযৌক্তিক নয়, বরং যুক্তিযুক্ত। অবসরের বয়স যদি ১০ বছর না করা হয়, তাহলে তারাও হবেন বঞ্চনার শিকার। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দুশ্চিন্তা এবং হতাশার যন্ত্রণায় নিভে যাবে আরো অনেক জীবনপ্রদীপ। এক্ষেত্রে সরকার শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ১৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর করলে এসব হতাশাগ্রস্ত মানুষ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাবে। বিষয়টি অধিক বিবেচনার দাবি রাখে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, নিবন্ধকার