পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব নিমেষেই ধ্বংস করতে পারে গামা রে বার্স্ট

মানুষ শত চেষ্টা করেও এই আঘাত রুখতে পারবে না

ছবি : ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব নিমেষেই ধ্বংস করতে পারে গামা রে বার্স্ট

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২ জুলাই, ২০১৮

অতিরিক্ত গ্রহাণুর আঘাতে জীবনধারণের অনুকূল পরিবেশ নষ্ট হয়ে বিলুপ্ত হয়েছে অতিকায় ডায়নোসরের মতো প্রাণীরা। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে গ্রহাণুর আঘাত প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্তিতে হয়তো খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারবে না। কোনো গ্রহাণু ধেয়ে আসলে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি দিয়ে সেটা হয়তো প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু বড় ধরনের পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতো ঘটনা মানব সভ্যতাকে একেবারে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মানুষ নিজের প্রতি হয়তো অতটা রূঢ় হবে না। এতটা আত্মঘাতী কাজ মানুষের বিবেকই থামিয়ে দেবে।

কিন্তু মহাকাশ থেকে এমন কোনো আঘাত আসতে পারে যার কারণে পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই বিলুপ্ত হতে পারে। মানুষ শত চেষ্টা করেও সেই আঘাত রুখতে পারবে না।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামীতে পৃথিবীতে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর বিলুপ্তির কারণ হবে জিআরবি বা গামা রে বার্স্ট। তাদের দাবি, গামা রে বার্স্ট আলোর বেগে আসে বলে বুঝতেও পারা যাবে না সেটি কখন আঘাত হানছে। কেবল আঘাত হানার ধাক্কা খাওয়ার পরে তার প্রভাব দেখে বুঝতে পারা যাবে যে এটা কতটা ভয়ঙ্কর।

কী এই গামা রে বার্স্ট

গামা রশ্মি হলো উচ্চ কম্পাঙ্কের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বা ফোটন কণা। এর শক্তি দৃশ্যমান আলোর চেয়ে অন্তত ৫০ হাজার গুণ বেশি হতে পারে। সেজন্য এটি প্রাণী দেহের ডিএনএকে আঘাত করে অনায়াসে ভেঙে দিতে পারে। পৃথিবীর চারপাশে যে ওজোনস্তর রয়েছে তা ক্ষতিকারক মহাজাগতিক রশ্মিকে আটকে দেয়। কিন্তু গামা রশ্মি এই স্তর ভেদ করতে পারে; যার ফল ভয়াবহ। এর ফলে ওজোনস্তর পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাবে।

গামা রে বার্স্ট প্রথম নজরে আসে গেল শতকের ষাটের দশকে। যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠায়। উপগ্রহগুলোর কাজ ছিল গামা রশ্মির বিকিরণকে শনাক্ত করা। উপগ্রহগুলো এতটাই শক্তিশালী ছিল যে চাঁদের অপর পৃষ্ঠে যদি কোনো বিস্ফোরণ ঘটে তাও ধরতে পারবে। আর সত্যি সত্যিই মহাকাশ থেকে আসা গামা রশ্মির বিকিরণ ধরা পড়ল।

২০০৮ সালের সালের মার্চ মাসে একটি গামা রে বার্স্ট ধরা পড়ে যেটির উৎপত্তি ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে ছিল, অর্থাৎ দৃশ্যমান মহাবিশ্বের অর্ধেক দূরত্ব। এত বিশাল দূর ভেবেই অনুমান করা সম্ভব বিস্ফোরণটি কতটা শক্তিশালী ছিল। সূর্য তার ১০০০ কোটি বছরের জীবনকালে যে পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করে একটি গামা রে বার্স্ট মাত্র এক সেকেন্ডে তার থেকেও বেশি শক্তি তৈরি করে।

গামা রে বার্স্ট দুইভাবে হতে পারে। যখন দুটি নিউট্রন তারা একে অপরের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক মুহূর্তে জুড়ে গিয়ে তৈরি করে একটি ব্ল্যাক হোল। এর ফলে যে মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টি হয় তাকে গামা রে বার্স্ট বলে। আবার সূর্যের চেয়ে ৮ গুণ ও তার বেশি ভারি তারা মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্ল্যাক হোল তৈরি করলে গামা রে বার্স্ট তৈরি করতে পারে।

গড় হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিদিন একটা করে জিআরবি হয়েই থাকে। কিন্তু এদের বেশিরভাগটাই ক্ষতিকারক নয়। কারণ এগুলো অনেক দূরের। তবে ১০০০ আলোকবর্ষের মধ্যে যদি কোনো জিআরবি হয়ে থাকে এবং এর গতিপথের সামনে যদি পৃথিবী থাকে তাহলে পৃথিবীর সামনের অংশটা পুরে যাবে।

বিজ্ঞানীদের অনুমান ৪৪০ কোটি বছর আগে একবার হয়ে থাকতে পারে। সেই সময় হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। যদিও পৃথিবীর পরিবেশ সে সময় গরম থাকার কথা। মনে করা হয়, GRB আঘাতের কারণের এটা হয়েছে। এর জন্য প্রায় ৮৫% সামুদ্রিক প্রাণী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

৮০০০ আলোকবর্ষ দূরে WR104 নামে একটি মৃত্যুপথগামী লাল তারা রয়েছে। যার ঘূর্ণন অক্ষ পৃথিবীর দিকেই তাক করে আছে। যদি এই মুহূর্তে ওই তারা থেকে GRB ধেয়ে আসে পৃথিবীতে আবার প্রাণের ধ্বংসলীলা শুরু হবে। তবে এটি সবকিছুর শেষ তা বলা ভুল হবে। কারণ একটা বৃহৎ তারা ধ্বংসের অবশেষ থেকেই যেভাবে আমাদের সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে সেভাবেই শুরু হবে নতুন তারার জগৎ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads