পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে প্রচার শেষ

তিন সিটির লোগো

নির্বাচন

তিন সিটিতে ভোট কাল

পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে প্রচার শেষ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই, ২০১৮

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে সিটি করপোরেশনে ভোট উৎসব আগামীকাল সোমবার। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এই তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা ১৮ দিনের নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন, যা শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে। তবে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে মুখর ছিলেন দেশের প্রধান দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। অন্যান্য দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরাও নানা অভিযোগ করেছেন; যা মূলত ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীদের বিপক্ষে। 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের তিন সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের অভিযোগ ওঠার পর এই তিন সিটিতে নিজেদের জয়ী হতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা গণসংযোগের শুরু থেকেই ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি ‘খুলনা-গাজীপুরের মতো কারচুপির’ চেষ্টার অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার-লিফলেট সাঁটাতে বাধাদান, পোস্টার ছেঁড়া, মাইকিংয়ে বাধা, কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো, পুলিশকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তারা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এসব ঘটনায় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি, দায়সারা ভূমিকা পালন করেছে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না করতে পারার অভিযোগের তির নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থীদেরও। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে। সেখানে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনে কোটি টাকার ওপরে ব্যয় করেছেন। তবে তিন সিটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচারকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা শতাধিক অভিযোগ করেছে। বলে বেড়াচ্ছে, ভোট করে কী হবে, নৌকা তো জিতেই আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।’ নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিএনপি অপকৌশল গ্রহণ করছে বলে খায়রুজ্জামান মন্তব্য করেন। পরে লিটন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শেষ গণসংযোগ করেন।

রাসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল গতকাল বিকালে শ্রাবণের বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মী ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গণপদযাত্রা করেন। তারা মালোপাড়ার পার্টি অফিস থেকে শুরু করে সাহেববাজার দিয়ে বিন্দুর মোড় হয়ে রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পথসভা করেন। এতে পুরনো অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এই সরকার খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কারচুপি করে দলীয় প্রার্থীকে জিতে মনে করছে রাজশাহীতে একই রকম হবে। কিন্তু রাজশাহীর মানুষ এত বোকা নয় যে সরকারের নীলনকশা চেয়ে চেয়ে দেখবে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকরা এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে।

রাসিক নির্বাচনে থাকা পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে অপর তিনজন হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান ও গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ।

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে গতকাল দিনভর বৃষ্টির মধ্যেও প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিএনপির অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত  ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবাইদুর রহমান মাহবুব, বাসদের ডা. মণীষা চক্রবর্তী, সিপিবির আবুল কালাম আজাদ মাঠে শেষ মুহূর্তে গণসংযোগ করেছেন। এর মধ্যে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সরোয়ার এবং আওয়ামী লীগের সাদিক মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে ভোটারদের কাছে ডিজিটাল প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং ভোট চেয়েছেন। এদিকে তিন মেয়র প্রার্থীর সহধর্মিণীরাও ঘরে বসে নেই। তারাও স্বামীর পক্ষে গণসংযোগ করছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রচারণার শেষ সময়ে এসেও বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। গতকাল তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল সিলেটে অবস্থান করছেন বলে খবর পেয়েছি। নির্বাচনের আগে তাদের এ ধরনের অবস্থানে প্রশাসন প্রভাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় রাতের বেলা গিয়ে হয়রানি করছে। আমার সম্ভাব্য এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেও কাজ হচ্ছে না।

তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিসিক নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, একটি পক্ষ পরাজয় আঁচ করতে পেরে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। অভিযোগ করাই বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সিলেটে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে অপর প্রার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগরের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিপিবি-বাসদের আবু জাফর, ইসলামী শাসনতন্ত্রের ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, এহসানুল হক তাহের গতকাল নির্বাচনী গণসংযোগ করেছেন। নির্ধারিত সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads