পানিশূন্য ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

পানিশূন্য ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা

  • প্রকাশিত ৬ এপ্রিল, ২০২১

দেলোয়ার কবির (ঝিনাইদহ) ও টিপু সুলতান (কালীগঞ্জ) 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জসহ ৬ উপজেলায় পানির জন্যে চলছে হাহাকার। মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদী কোথাও নেই পানি। পানি নেই নলকূপেও। ধান চাষের জমিতেও পানি দিতে পারছে না কৃষকরা।

৬টি উপজেলায় লাখো নলকূপে নেই কোনো পানি। এর মধ্যে জেলার শুধুমাত্র শৈলকুপা উপজেলাতেই ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে গেছে। জেলার সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে কোনো নলকূপেই পানি উঠছে না। কয়েক মাস ধরেই চলছে এ অবস্থা।

জানা গেছে, পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্রমেই পানিশূন্য আর গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সব নলকূপই অকেজো হয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। প্রত্যেক বাড়ির নলকূপ পানিশূন্য। ফলে একদিকে রান্নাসহ ঘর-গৃহস্থালীর কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে অন্যদিকে গরু-ছাগল, গৃহপালিত পশু বা পশু-পাখির জন্যও পাচ্ছেনা বিশুদ্ধ পানি। এমন অবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করে তারা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ৬টি উপজেলা। এগুলো হলো শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও ঝিনাইদহ সদর। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদনদী প্রবাহিত। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত; সেখানে হয় ফসলের চাষ।

উপজেলাগুলোর ভেতরে শুধুমাত্র শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর শৈলকুপা উপজেলার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলাতে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকূপ রয়েছে, তার মধ্যে সরকারি নলকূপ মাত্র ১৫শ, বাকি সব ব্যক্তিমালিকানার। এসবের ভেতরে ৩০ হাজারই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, উপজেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানির সংকট শুরু হয়েছে। তাদের অফিসপাড়ার ৪টি নলকূপই অকেজো বলে জানান। আড়পাড়া, শিবনগর, ফয়লা, নরোন্দ্রপুর, কলেজপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।

কালীগঞ্জের আড়পাড়া গ্রামের আখতার হাসান জানান, তাদের কলে বর্তমানে পানি উঠে না। মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জাহাঙ্গির হোসেন জানান, স্কুলের কলে মারাত্মক পানি সংকট দেখা দিয়েছে। স্কুলের কলে এখন পানি উঠছে না।

শৈলকুপার মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর, কবিরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, সমস্ত অগভীর নলকূপ অকেজো। গত মাসেও কিছু নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে সব নলকূপ।

পানিশূন্য ঝিনাইদহের ৬

 

গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো এমন অবস্থায় নদনদী বা দূরের কোনো জলাশয় থেকে পানি এনে ফুটিয়ে তা পারিবারিক সব কাজে ব্যবহার করছে। মনোহরপুর গ্রামের গৃহবধূ সাগরী, কৃষক মোকন মিয়া, বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক ভুন্ডলে মিয়াসহ অনেকে জানান, গত কয়েকমাস ধরেই তাদের নলকূপে কোনো পানি নেই। শুধু গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে নয় পানি নেই স্কুল-কলেজ, বিদ্যালয়ের নলকূপ, পানি নেই হাসপাতালের নলকূপেও। হাট-বাজার, মাঠ-ঘাটের সব জায়গাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক সামর্থ্যবান মানুষ মাটি খুঁড়ে তাদের নলকূপের নিচে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ইঞ্জিনচালিত সাবমারসেবল পাম্প বা এ জাতীয় মোটর স্থাপন করে নলকূপের পানি সচল রাখছে।

কালীগঞ্জের টিউবওয়েল মিস্ত্রি শাদ আলী জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লেয়ার স্তর পাওয়া যায় কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পনির লেয়ার মিলছে, তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। তারা এলাকায় টিউবওয়েল বরিং করতে গিয়ে পানির জন্য হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে গভীর নলকূপ পুতার সময় স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে তারা নলকূপ বরিং করে টিউবওয়েল পুতে দিচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন মহলের অনেকেই। মাঠে সেচকাজে ব্যাপকহারে সেচপাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পনির অতিরিক্ত ব্যবহার করায় সংকট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

সুপেয় পনির সংকটে জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক তরুণ কুমার দাস বলেন, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করতে পারলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। বিশেষ করে শিশুরা ডায়েরিয়া, আমাশয়, পেটেরপীড়াসহ নানা অসুখে পড়ে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা তাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ৩২ হাজার নলকূপ স্থাপন করা আছে। আর এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে তারা জানিয়েছেন, যাতে ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাস হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে বলেও তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads