পাকিস্তানের নির্বাচনে ‘গণতান্ত্রিক ক্যু’র আশঙ্কা

পাকিস্তানের নির্বাচনে ‘গণতান্ত্রিক ক্যু’র আশঙ্কা

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

পাকিস্তানের নির্বাচনে ‘গণতান্ত্রিক ক্যু’র আশঙ্কা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই, ২০১৮

রাত পোহালেই গণতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর পাকিস্তানে ১১তম জাতীয় নির্বাচন। সব জল্পনা-কল্পনার বাইরে দেশটির প্রায় দশ কোটির অধিক ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন নতুন আগামীর আশায়। কিন্তু নতুন এই আগামী সামরিক শাসনমুক্ত হতে পারবে কি না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয় রয়েছে। দীর্ঘ সত্তর বছরের ইতিহাসে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার এবং সামরিক সরকারের মধ্যকার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট।

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের পার্টির পেছনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ রয়েছে এমন অভিযোগ করেছে। যদিও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অতীতে দেশটিতে সেনাবাহিনী সরাসরি সামরিক পন্থায় ক্ষমতা গ্রহণ করে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করেছে। কিন্তু ২০০৮ সালের দিকে বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারের ক্ষমতা কাঠামোর মধ্য দিয়ে নতুন সামরিকীকরণের সূচনা হয়। যার প্রথম বহির্প্রকাশ ২০১৩ সালের নির্বাচন।

অতীতের তুলনায় এবারের নির্বাচনী রাজনীতি তিনটি পর্যায় অতিক্রম করছে। প্রথমত, গত রোববার বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকি ইসলামাবাদ হাইকোর্টে বলেন, আইএসআই (পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা) বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে যাতে ভোটে যেতে না দেওয়া হয় সেই চাপ প্রয়োগ করছে। গত বছর সুপ্রিমকোর্ট দুর্নীতি এবং অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে নওয়াজকে রাজনীতিতে আজীবন নিষিদ্ধ ও দশ বছরের জেল দেয়।

আইএসআইকে ভয় পান না-এমন বক্তব্যে বিচারপতি সিদ্দিকি বলেন, আমাকে হত্যা করা হতে পারে তবুও আমি ভীত নই। এমন বক্তব্যের পর স্পষ্টতই বোঝা যায় দেশটির এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা সক্রিয়। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে এবার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে অংশগ্রহণ করছে। দলগুলোর অনেকেই মূল সারির পার্টিগুলোর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। দেশটির সামরিক বাহিনী বনাম একটি পক্ষ যে ক্রিয়াশীল তা এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা ক্রমশ স্পষ্ট। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতায়নে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এমনকি ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও প্রশাসনিক দফতরে সেনা কর্মকর্তারা অংশ নেন।

প্রথম দুই পর্যায়ের রাজনীতি ইতোমধ্যেই অনেকটা খোলাসা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের যে রাজনীতি তা এখনো খোলাসা হতে বাকি। নওয়াজের পিএমএল থেকে অনেক প্রার্থীই পার্টি বদল করে ইমরান খানের পার্টিতে নাম লিখিয়েছে। এ ছাড়া অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবেও দাঁড়িয়েছে। বিবিসি কিছু নথি প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় কোনো প্রার্থী দলত্যাগ করতে না চাইলে তাদের শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) পেছনের শক্তি আসিফ আলি জারদারি এবং বিলওয়াল জারদারি ভুট্টো। পিপিপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির পুরনো মামলা আবারো চালু করা হয়েছে, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। বামপন্থি আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির এক শীর্ষস্থানীয় প্রার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের নির্বাচনে পিটিআই ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার সুতো যদি সেনাবাহিনীর হাতে থাকে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads