বাগেরহাটের মোংলায় পশুর নদের চ্যানেলে আবারো ডুবে গেছে কয়লাবোঝাই একটি লাইটার জাহাজ

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ

পশুর চ্যানেলে ফের জাহাজডুবি, ক্ষতির আশঙ্কা

  • বাগেরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ এপ্রিল, ২০১৮

বাগেরহাটের মোংলায় পশুর নদের চ্যানেলে আবারো ডুবে গেছে কয়লাবোঝাই একটি লাইটার জাহাজ। মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে চ্যানেলের হারবাড়িয়া এলাকায় গত শনিবার দিবাগত রাতে এমভি বিলাস নামের জাহাজটি ডুবে যায়। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। গত চার বছরে সুন্দরবনের আশপাশে কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজডুবির ঘটনাগুলো বেশিরভাগই ঘটেছে এ চ্যানেলে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারের জাহাজডুবিতে কেউ হতাহত হয়নি; চ্যানেল সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। জাহাজের মালিকপক্ষের দাবি, এ ঘটনায় বন ও পরিবেশের ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতি হবেই। 

ডুবে যাওয়া জাহাজটির চালক মো. আমির হোসেন জানান, হারবাড়িয়া-৬ নম্বর অ্যাংকোরেজে থাকা একটি বিদেশি জাহাজ থেকে ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই করা হয় এমভি বিলাসে। দুপুর ২টার দিকে চ্যানেলের তীরের কাছাকাছি গিয়ে অবস্থান নেওয়া হয়। এরপর রাত ৩টার দিকে ভাটার সময় জাহাজটি চরে আটকে কাত হয়ে ডুবে যায়। কয়লা নিয়ে জাহাজটি ঢাকার মিরপুরে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানান চালক।

কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাহারা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. লালন হাওলাদার জানান, গত ১৩ এপ্রিল লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এমভি অবজারভেটর জাহাজটি সাড়ে ২৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়ার ৬ নম্বর অ্যাংকরে নোঙর করে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই জাহাজ থেকে লাইটার এমভি বিলাস ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ঢাকার মিরপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে হারবাড়িয়ার ৫ নম্বর অ্যাংকরে লাইটারটি পৌঁছলে ডুবোচরে আটকা পড়ে। ডুবোচর থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মোংলা বন্দরের সাহায্য চান লাইটারের মাস্টার। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধার যানটি ঘটনাস্থলে পৌঁছেও তা রক্ষা করতে পারেনি। তার দাবি, ডুবে যাওয়া জাহাজের কয়লা কোথাও ভেসে যায়নি এবং এতে পরিবেশের ক্ষতিরও কোনো আশঙ্কা নেই।

এদিকে ডুবন্ত জাহাজটি দ্রুত উদ্ধারে মালিকপক্ষকে গতকাল রোববার সকালে নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ জানান, দুর্ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার ভাষ্য, কার্গো জাহাজটি বন্দরের মূল চ্যানেলের বাইরে ডুবেছে। এতে চ্যানেল সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে।

তবে কার্গোডুবির ঘটনায় পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কয়লার জাহাজডুবির ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দিলীপ কুমার দত্ত জানান, একটা ইকো-সিস্টেমে বাইরের যেকোনো কিছুই ক্ষতিকর। কয়লা তো বাইরের জিনিস।

গত বছরের ৫ জানুয়ারি সুন্দরবনের মাত্র ৩০০ গজ দূরে একই এলাকায় বিদেশি একটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তলা ফেটে ডুবে যায় সিমেন্টের কাঁচামালবাহী লাইটার জাহাজ এমভি শোভা। একই বছরের ১২ জানুয়ারি মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার দূরে বন্দর চ্যানেলের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় নোঙর করা বিদেশি জাহাজ এমভি লেডিমেরি থেকে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই এমভি আইচগাতি নামে একটি লাইটার জাহাজ প্রচণ্ড ঢেউ ও স্রোতের মধ্যে পড়ে তলা ফেটে ডুবে যায়।

২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবরেও পশুর চ্যানেলে জয়মনির ঘোল নামক স্থানে ৫১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় লাইটার জাহাজ এমভি জিয়া রাজ। ওই জাহাজডুবির ঘটনায় বনের এক কোটি টাকার প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করে মামলা করেছিল সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ।

২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ডুবে যায় জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ ওটি সাউদার্ন স্টার-৭। এতে জাহাজটি থেকে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নেস তেল সুন্দরবনে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে। মোংলা বন্দরের জেটি থেকে ৯ নটিক্যাল মাইল দূরে ওই জাহাজডুবিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।

একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৬০০ মেট্রিক টন সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে এমভি নয়নশ্রী-৩ নামে একটি জাহাজ পশুর চ্যানেলের জয়মনির ঘোল এলাকায় ডুবে যায়। একই মাসের ১২ তারিখে পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া এলাকায় প্রায় ৬৩০ মেট্রিক টন সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে ডুবে যায় এমভি হাজেরা-২ নামের আরেকটি মালবাহী জাহাজ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads