সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ত্রিশমাইল মোড়ে গতকাল রোববার অঝোরে কাঁদছিলেন দিনমজুর শাহাজান সরকার। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এ কান্না বেদনার নয়, খুশির। কান্নার কারণ জানতে চাইলে শাহাজান শোনান এক গল্প। এ গল্প তার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পাওয়ার গল্প, যিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন আজ থেকে বহু বছর আগে।
শাহাজান বলেন, তাদের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। পনেরো বছর আগের কথা। পড়ন্ত এক বিকালে চা পানের কথা বলে হুট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তার বাবা আবুল খায়ের (৫৫)। স্থানীয়ভাবে তাকে সবাই লনু মিয়া বলে চেনেন। তারা দুই ভাই, পাঁচ বোন। তার বাবা মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হলেও আচরণের মধ্যে পাগলামির তেমন নমুনা ছিল না। বাবা চা পানের কথা বলে সেই যে বেরিয়ে গেলেন আর বাড়ি ফেরেননি। এরপর তিনি কোথায় ছিলেন তা কারো জানা ছিল না।
তিনি আরো জানান, পাটকেলঘাটা থানার ত্রিশমাইল এলাকার চা বিক্রেতা নূর ইসলাম মাস তিনেক আগে স্থানীয় সাইকেল মিস্ত্রি গাউসের দোকানের সামনে তার বৃদ্ধ বাবাকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি তার বাবাকে তুলে নিয়ে মসজিদের পাশে থাকতে দেন। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি তার বাবাকে খাইয়েছেন, চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। পরে বাবার ঠিকানা সংগ্রহ করে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সরবরাহ করেন।
গণমাধ্যমকর্মী আবুল কাসেম বলেন, ঠিকানা সংগ্রহ করে মতলব প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাশের মাধ্যমেই খোঁজ পান লনু মিয়ার পরিবারের।
লনু মিয়ার ছোট ভাই শাহ আলম বলেন, ভাইয়ের খবর জানতে পেরে তারা বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন। ভাইকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে রাতে গাড়ির মধ্যে এতটুকু ঘুমাতে পারেননি কেউই।
নাতি ফারুক হোসেন বলেন, নানার চেহারা কেমন আমার মায়ের কাছ থেকে শুনে মনের মধ্যে একটা ছবি এঁকে রেখেছিলাম। তাই নানাকে চিনতে তেমন সমস্যা হয়নি। নানাকে পেয়ে তার দীর্ঘদিনের একটি মনোবাসনা পূর্ণ হলো।
ত্রিশমাইলে যে ছোট্ট কাঠের ঘরটিতে লনু মিয়া থাকতেন, সেই ঘরের মধ্যে বসেই ছেলে-নাতি আর ভাইকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন লনু মিয়া। কথা বলতে পারছিলেন না। চোখের নোনা জ্বলে শুধুই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন নীরবে।
ছেলে শাজাহান সরকার জানান, রাতেই তারা বাবাকে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হবেন।