ছবি : ইন্টারনেট

মধ্যপ্রাচ্য

নিয়ম ভেঙে লড়াইয়ে নেমেছে গাজার নারীরা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ এপ্রিল, ২০১৮

প্রায় চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজা-ইসরাইল সীমান্তে বিক্ষোভ করছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। নিজেদের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার দাবিতে গত ৩০ মার্চ থেকে চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ জন নিহত ও আড়াই হাজারের বেশি আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। বিশাল এই বিক্ষোভে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ছবিগুলোয় বিক্ষুব্ধ তরুণ ফিলিস্তিনিদের চেহারাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনি নারীদের মুখচ্ছবি দেখা যায়, যা অন্যান্য মিডিয়ায় অনুপস্থিত।

মুখে স্কার্ফ বেঁধে ইসরাইলি টিয়ারশেলের বিরুদ্ধে পুরুষ ফিলিস্তিনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিবাদ করছেন তারা। পাশাপাশি তরুণ বিক্ষোভকারীদের সাহায্যেও এগিয়ে আসছেন তারা। গাজার ২৬ বছর বয়সী নারী তাঘরিদ আল বারাওয়ির মতে, ‘নারীরা গুলির শিকার হয় কম। আমরা পুরুষশাসিত সমাজে বাস করি এবং নারীরা বিক্ষোভ করছে গাজায় এমন দৃশ্য অনেকটা অদ্ভুত। যদিও বর্তমানে পুরুষরা বিক্ষোভকারী নারীদের মেনে নিচ্ছে এবং উৎসাহ দিচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা বুঝতে পারছে যে আমরা সকলেই একই অংশ এবং নারীদের উপস্থিত হওয়া উচিত।’ কিন্তু এই নারীদের জন্য নেই কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা। গ্রেট রিটার্ন মার্চ মুভমেন্ট শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৬০ জন নারী আহত হয়েছেন।

প্রথমবারের মতো কাঁদানে গ্যাসের শিকার হয়েও বিক্ষোভ ছেড়ে যাননি বারাওয়ি। তার মতে, ‘আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত সাহস কাজ করছিল অথবা একে কী বলে তা ঠিক আমি জানি না। যতই আমি সীমান্তের কাছাকাছি যাচ্ছিলাম ততই আমার সামনে যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছিল। সম্ভবত আমাদের আবাসভূমির কাছাকাছি আসাতেই এমনটা হয়েছিল।’

অনেক বছর ধরেই প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ফিলিস্তিনিরা গাজা-ইসরাইল সীমান্তে প্রতিবাদ করে আসছে। যদিও গত সব শুক্রবারের চেয়ে এবারের শুক্রবারগুলো ছিল আন্দোলনের চারিত্র্যগত দিক দিয়ে ভিন্ন। এর আগে কোনো বিক্ষোভে এত পরিমাণ ফিলিস্তিনি নারীকে দেখা যায়নি। আর তাই গতকাল শুক্রবারের বিক্ষোভকে ‘উইম্যানস মার্চ অব গাজা’ শিরোনামে ডাকা হয়েছিল।

বিক্ষোভের জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গেড়েছে গত মার্চের শেষ থেকেই। ওই তাঁবুতে থাকা অস্থায়ী মেডিকেল শিবিরে বহু নারী সেবিকার ভূমিকা পালন করছেন। প্রত্যেক দিন বারো ঘণ্টা করে তারা শ্রম দিচ্ছেন আহতদের সেবায়। শুধু তাই নয়, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বহু নারী খাবার বানানো থেকে শুরু করে তথ্য আদান-প্রদানের কাজও করছেন। এমনই একজন ২০ বছর বয়সী তরুণী রাজন আল নাজ্জার। গত ১৩ এপ্রিল ইসরাইলি সেনাদের ছোড়া গ্যাস হামলায় আহত ভাঙা হাত নিয়েও তিনি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। যদিও অন্য সঙ্গীরা তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলেছিলেন। বিক্ষোভরত নাজ্জার বলেন, ‘ইসরাইলিরা যতজনকে ইচ্ছে গুলি করছে। এমন অবস্থায় আমি মানুষের পাশে থাকতে না পারলে আমার লজ্জা লাগবে। আহতদের সেবা দেওয়া আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।’ নিহত এক বিক্ষোভকারীর শেষ বক্তব্য আজো মনে পড়ে নাজ্জারের। মৃত্যুর আগে নাজ্জারকে নিজের মা আর ভাইকে দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন ওই ব্যক্তি। ইসরাইলি সেনাদের স্নাইপারের গুলিতে নিহত হন তিনি। ওই ঘটনা নাজ্জারকে আমূলে নাড়িয়ে দেয়।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে ফাত্তাহ এবং হামাস কেন্দ্রিক একটা দ্বিধা-বিভক্তি আছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি নারীদের ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব একেবারেই নেই। আর তাই নারীদের এই অংশগ্রহণে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন ইসরাইলি প্রশাসন। তাই তো ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদ্রেই টুইটবার্তায় বলেন, ‘যারা নিজের ঘরের ও সন্তানদের যত্ন নেয় এবং সকলের সামনে উদাহরণ হয়ে থাকে তারা সম্মানের অধিকারী নারী। আর সম্মানবঞ্চিত নারীরা এসব দায়িত্ব পালন করে না, তারা নারীত্ববিরোধী আচরণ করে এবং তাদের সমাজে কীভাবে দেখা হচ্ছে তা নিয়েও চিন্তা করে না।’ কিন্তু বাস্তবতা এমন যে, বহু নারী তাদের স্বামী সন্তানদের নিয়েই ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করছেন এবং এ নিয়ে ফিলিস্তিন সমাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

এদিকে গতকাল শুক্রবারের বিক্ষোভে ইসরাইলি পুলিশের গুলিতে আহমেদ আবু আকিল নামে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যু ও ছয়জন আহত হয়েছে বলেও জানায় অ্যাসোসিয়েট প্রেস। শুক্রবার জুমার নামাজের শেষে সীমান্তবর্তী এলাকায় লিফলেট বিতরণ করে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। লিফলেটে ফিলিস্তিনিদের সীমানা প্রাচীর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads