নারকেল এক ‘জীবন বৃক্ষ’

আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নারকেলের জুড়ি নেই

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

নারকেল এক ‘জীবন বৃক্ষ’

  • প্রকাশিত ২৯ অগাস্ট, ২০১৮

মো. আবদুর রহমান 

নারকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নারকেলের জুড়ি নেই। তাই নারকেলকে ‘জীবন বৃক্ষ’, ‘স্বর্গীয় বৃক্ষ’ প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে স্মরণাতীতকাল থেকে এ ফসলের চাষ হয়ে আসছে। ব্যবহার বৈচিত্র্যে এটি একটি অতুলনীয় উদ্ভিদ। নারকেল গাছের প্রতিটি অংশই মানুষের কাজে লাগে। কাঁচা নারকেল বা ডাবের পানি উত্তম পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নারকেল দিয়ে নানা ধরনের খাবার তৈরি হয়। চুল ও ত্বক ভালো রাখতে নারকেল তেলের জুড়ি নেই। কোনো কোনো দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে কেশ তেল হিসেবে এর কদর বেশি। নারকেলের মালা দিয়ে হুঁক্কা, চামচ, পেয়ালা, বোতাম তৈরির প্রচলন অতি প্রাচীন। আধুনিক যুগেও এর ছোবড়া দিয়ে উন্নত ধরনের গদি, গালিচা, জাজিম, ব্রাশ, পাপোশ, রশি তৈরি করা হচ্ছে। এদেশের নারকেল আঁশের রশি ‘কাতা’ অত্যন্ত পরিচিত। নারকেল গাছের পাতা ঘর ছাউনি, মাদুর, ঝুড়ি ও ঝাড়ু তৈরিতে ব্যবহূত হয়। আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। নারকেল গাছ গৃহনির্মাণ সামগ্রীর কাজে ব্যবহার করা হয়। নারকেলের খৈল গবাদিপশুর খাদ্য। এর খৈল জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার হয়। 

ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারকেল উৎপাদন করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি যেমন- উন্নত জাতের ব্যবহার, সঠিক জমি নির্বাচন, সঠিক মাত্রায় সময়মতো রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ এবং গাছের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে। 

বাংলাদেশের, বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া নারকেল চাষের জন্য অনুকূল। বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, কক্সবাজার, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে বেশি নারিকেল উৎপন্ন হয়। আমাদের দেশে নারকেলের ফলন অত্যন্ত কম।  

এক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, এদেশে প্রতিটি গাছের গড় ফলন বছরে মাত্র ১৬টি। শ্রীলংকায় মাথাপিছু নারকেল উৎপাদিত হয় ৩০০টির বেশি। বাংলাদেশে মাথাপিছু উৎপাদিত হয় মাত্র ১টি। এর মধ্যে আবার শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ নারকেল ডাব অবস্থায় খেয়ে ফেলা হয় বলে উৎপাদনের একটি বিরাট অংশ থেকে তেল পাওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিদেশ থেকে নারকেল তেল আমদানি করতে হয়। নারকেল ও নারকেলজাত দ্রব্যের চাহিদা পূরণ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে দেশে পরিকল্পিতভাবে নারকেলের চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নারকেল উৎপাদন করে একজন চাষি সহজেই অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। এক তথ্যে জানা গেছে, উচ্চফলনশীল জাতের একটি গাছ থেকে বছরে ১০০-১৫০টি পর্যন্ত নারকেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ১০ লাখ ৫০ হাজার বসতবাড়ি রয়েছে। যদি ১০ শতাংশ বসতবাড়ির আঙিনায় ৫টি করে নারকেল গাছ রোপণ করা যায়, তাহলে দেশে বছরে ৭০ লাখ ৫০ হাজার মিলিয়ন অতিরিক্ত নারকেল গাছ সংযোজিত হতে পারে। ৫-৬ বছরের মধ্যে এসব গাছ ফলন দিতে শুরু করবে এবং এতে করে একটি পরিবার বছরে অনেক টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে। এভাবে দেশে বিরাজমান নারকেল তেলের ঘাটতি পূরণ হবে। 

অর্থকরী ফল এবং তেল জাতীয় ফসল হিসেবে নারকেলের গুরুত্ব বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারকেলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা প্রচুর। নারকেল তেল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং নারকেল শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহু লোকের কর্মসংস্থান ও জাতীয় আয় বাড়ানো সম্ভব। 

লেখক : উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, তেরখাদা, খুলনা 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads