আসামের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অব সিটিজেনসের (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় নাম বাদ পড়া নিয়ে বিতর্কে উত্তপ্ত ভারতের সংসদের উভয় কক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এই ইস্যুতে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) সভাপতি অমিত শাহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নাম জড়িয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করেন। খবর এনডিটিভি।
তিনি বলেন, ‘রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আসামে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করতে চুক্তি করেছিলেন। দুই ইউপিএ সরকার যা করতে পারেনি তা এনডিএ সরকার করতে পেরেছে।’ এমন বক্তব্যের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদের মুখে সংসদ অধিবেশন
মুলতবি করে দেওয়া হয়। তবে তার আগে রাজ্যসভা চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তার কাজ শেষে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে সরকারি বক্তব্য জানাবেন।’ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোকে এনআরসি নিয়ে রাজনীতি ও ভয় না ছড়াতে পরামর্শ দেন।
লোকসভাতেও তৃণমূলত নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অন্যান্য সকল ইস্যু বাদ দিয়ে আসাম প্রসঙ্গে কথা বলতে চাপ প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া কংগ্রেস সকল পার্টির অংশগ্রহণে একটি সভা আয়োজনের দাবি জানায়। কংগ্রেসের মতে, বিজেপি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিশেষত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে।
কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, ‘আমাদের জন্য এনআরসি ইস্যু খুবই গুরুতর সমস্যা। একে সংবেদনশীলভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। ভারতের সত্যিকারের নাগরিকদের প্রতি অবিচার করা উচিত হবে না।’ মমতা বলেন, বিজেপি সরকার মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশি অভিবাসী বলে সংজ্ঞায়িত করতে চায়। ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই অবিচার করা হয়েছে।
এদিকে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট গতকাল এক নির্দেশনায় জানান, খসড়া তালিকার ওপর ভিত্তি করে গ্রেফতার বা বিতাড়নের মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। জনমনে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি যাতে না হয়, তাই আগামী ৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে আসামের খসড়া নাগরিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে ব্যাপক সমালোচনার মাঝে কেন্দ্রীয় ও আসাম সরকার শেষমেশ নাগরিকত্ব খসড়া থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ দেবে বলে জানায়, যারা বাদ পড়েছে তারা আগামী ৩০ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নাম তালিকাভুক্ত করতে পারবেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা বা সমস্যা থাকলে তা লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো যাবে। এ ছাড়া গতকাল বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, একই পরিবারের মা-মেয়ের নাম তালিকায় থাকলেও নেই বাবা বা স্বামীর নাম। আসামের কাছাড় জেলার শিলকুড়ি এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন সূত্রধর এমন অভিযোগ করেছেন।