উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বাংলাদেশে ওষুধ খাতে বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় এপিআই (কার্যকর ওষুধ উপকরণ) ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদন ও রফতানি নীতি তৈরি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এপিআই উৎপাদন ও রফতানি নীতিটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
এ সময় জানানো হয়, বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু খাত বা পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য অন্যতম। আর এ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল হচ্ছে এপিআই, যা প্রায় সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। এপিআই রফতানির মাধ্যমে দেশের রফতানি খাতকে দৃঢ ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো এখন সময়ের দাবি। এপিআই খাতে টেকসই শিল্পায়নের মাধ্যমে রফতানি বহুমুখীকরণ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নীতি প্রণয়ন করেছে।
নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশে নিবন্ধিত সব এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদকরা নিঃশর্তভাবে কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেবল যোগ্যতার ভিত্তিতে এ সুবিধা দেওয়া হবে। ২০৩২ সাল পর্যন্ত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং উৎসে কর হতে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া সব ধরনের কাঁচামাল, স্থায়ী সম্পদ ও অন্যান্য পণ্য সেবা এবং ক্রয় ও বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট এবং উৎসে ভ্যাট কর্তন মওকুফ করা হবে। এ ছাড়া ন্যূনতম ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্তে বাংলাদেশে নিবন্ধিত সব এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক রফতানিতে স্থানীয় উৎপাদকদের ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হবে। একই সঙ্গে এ নীতির প্রত্যাশিত মলিকিউল অর্জনের লক্ষ্যে সব এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদনে বার্ষিক টার্নওভার অন্তত ১ শতাংশ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ উৎপাদিত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে থাকে, যা ২ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশ বিশ্বে একশ’র বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে ওষুধ শিল্প খাত আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ডব্লিউটিও ট্রিপস চুক্তির অধীন ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে ২০৩২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়েভার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রফতানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে এপিআই না থাকায় ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহূত এপিআইয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আমদানিনির্ভর কাঁচামালের ওপর ওষুধ শিল্প টেকসই হবে না। এ ছাড়া ওয়েভার সুবিধা শেষ হলে ওষুধের মূল্যও বেড়ে যাবে। এ জন্য দেশীয়ভাবে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করা আবশ্যক।
কর্মকর্তারা আরো জানান, এপিআই খাতে একটি সময়োপযোগী নীতিমালা করা হলে তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। এ নীতি বাস্তবায়িত হলে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ২০৩২ সালের মধ্যে এপিআই উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো এবং রফতানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩৭০ এপিআই মলিকুল তৈরি করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এপিআই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।