ঈদের আগে ও পরে গত চার দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক, পুলিশ সদস্য, মা-মেয়ে ও পশু ব্যবসায়ীসহ কমপক্ষে ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে তল্লাশিরত পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসের নিচে পড়ে নিহত হয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ৬ আরোহী। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জে ৫, কুষ্টিয়ায় ৪, কুমিল্লায় ৪, কক্সবাজারে ২, টাঙ্গাইলে ২ এবং খাগড়াছড়ি, নীলফামারী, জামালপুর, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা ও মুন্সীগঞ্জে একজন করে নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৮২ জন। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফেনী : জেলা সদরে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় ৬ অটোরিকশা আরোহী নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে লেমুয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহীপাল হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল আওয়াল জানান, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি বাস সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ছয়জন নিহত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এ ঘটনায় আহত এক শিশু ও এক নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লেমুয়া ভাঙ্গার তাকিয়া এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছিল। মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ওই অটোরিকশাকে ধাওয়া দেয়। এ সময় চালক অটোরিকশা নিয়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো তিনজন মারা যায়।
সিরাজগঞ্জ : জেলার দুই জায়গায় আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল এলাকায় একটি ছাগলবোঝাই ট্রাক উল্টে চারজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া সলঙ্গা থানার চড়িয়া কামারপাড়া এলাকায় ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। ঈদের দিন গত বুধবার দুপুরে দুর্ঘটনা দুটি ঘটে। প্রথম দুর্ঘটনায় নিহতরা হলো- আবদুল করিম, মনসুর আলী, আবদুল মান্নান ও আবদুল লতিফ। এদের সবার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বাতিয়াপাড়া গ্রামে। পেশায় তারা ছাগল ব্যবসায়ী। সলঙ্গায় নিহত ব্যক্তির নাম আবদুল হামিদ। তার বাড়ি রাজশাহী জেলা সদরে।
কুষ্টিয়া : জেলায় আলাদা দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১০ জন। ঈদের আগের দিন গত মঙ্গলবার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল এবং ত্রিমোহনী এলাকায় ট্রাক, মাহিন্দ্র ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তারা প্রাণ হারায়। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
কুমিল্লা : আলাদা দুর্ঘটনায় মা-মেয়েসহ চারজন নিহত হয়েছে। জেলার দাউদকান্দি, বুড়িচং ও লাকসাম উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার ও বুধবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার দাউদকান্দি উপজেলার এক্সপিড পাম্পের কাছে বাস- প্রাইভেটকার সংঘর্ষে মো. রুবেল নামের এক বাসযাত্রী নিহত হয়। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ যাত্রী। নিহত রুবেল চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা। হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি প্রাইভেটকার নিয়ে পুকুরে পড়ে গেলে হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।
বুধবার রাতে মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার নাজিরা বাজার এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মা-মেয়ে মারা গেছে। তারা হলো- জেলার বুড়িচং উপজেলার উদয়নবাগ এলাকার আশরাফুল আলমের স্ত্রী ফারহানা বেগম ও তার মেয়ে কানিজ। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বিজরা এলাকায় বুধবার রাতে বাসচাপায় আলামিন নামে এক মোটরসাইকেল চালক প্রাণ হারিয়েছে। সে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বাসিন্দা।
কক্সবাজার : জেলার রামুতে বাসের ধাক্কায় মোহাম্মদ বাপ্পি (১৯) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু ক্রসিংয়ে হানিফ পরিবহনের একটি বাস তাকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে আরো একজন। বাপ্পি চকরিয়া উপজেলা সদরের গণি উদ্দিনের ছেলে ও রামু কলেজের শিক্ষার্থী। অপরদিকে উখিয়ার উপকূলীয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে টমটমের ধাক্কায় জাফর আলম (৮) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। সে উখিয়ার উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
টাঙ্গাইল : জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন প্রাণ হারিয়েছে। সখীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক আবদুস সামাদ। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন এবং রাত ১০টার দিকে ঢাকার মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে মারা যান। তিনি মির্জাপুর উপজেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের ওয়ার হাউস (ইন্সপেক্টর) পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নিজকল্পা গ্রামে।
মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের ধল্যা নামক স্থানে গত সোমবার রাতে বাসচাপায় মো. তুহিন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। তিনি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের আকছাদ আলীর ছেলে। তিনি ঢাকার এসবিতে কর্মরত ছিলেন। মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : জেলা সদরের আলুটিলা নামক এলাকায় বাস উল্টে রফিক নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ আহত হয়েছে ১৪ জন। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা জানায়, দুর্ঘটনার সময় চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছিল।
নীলফামারী : সদর উপজেলার সংঘলশী ইউনিয়নের ইকু জুট মিলের সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে একজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। ঈদের দিন গত বুধবার এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা সবাই মোটরসাইকেল আরোহী। নিহত আকতারুল ইসলাম ওই ইউনিয়নের বাদশাপাড়া গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে।
জামালপুর : পৌরসভায় শুক্রবার সকালে চলন্ত ইজিবাইকের ওপর গাছ পড়ে মুখলেছুর রহমান নামে এক যাত্রী নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। মুখলেছুর শহরের যোগীরঘোপা এলাকার মৃত মনসুর আলীর ছেলে।
ময়মনসিংহ : জেলার ফুলপুরের শাহাপুর এলাকায় শুক্রবার সকালে বাসচাপায় শামসুজ্জামান নামে এক পথচারী নিহত হয়েছে। ফুলপুর থানার ওসি একেএম মাহাবুব আলম জানান, ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকে উঠছিল শামসুজ্জামান। এ সময় একটি বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
সাতক্ষীরা : জেলার শ্যামনগর উপজেলায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের হাওয়ালভাংগী বাজার সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সফুরা বিবি হাওয়ালভাংগী গ্রামের সায়েদ আলী গাজীর স্ত্রী। শ্যামনগর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, মোটরসাইকেল ও চালককে আটক করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্রীনগরের কেয়টখীরা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।