মো. আবু তালহা তারীফ
দোয়ার মাধ্যমেই স্বীয় প্রভুর সান্নিধ্য ও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে দোয়াকে স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দোয়া শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে মহান প্রভুকে ডাকা, আহ্বান করা, ইবাদত করা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। (ইবনে মানসুর, লিসানুল আরব- ১৪, ২৫৭) আর দোয়া সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার পাক দরবারে চূড়ান্ত পর্যায়ের বিনয়, মুখাপেক্ষিতা, অক্ষমতা, নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করাকে দোয়া বলা হয়। (ইবনে হাজার আসকালানী, ফতগুল বারী- ১১:৯৫)। দোয়া হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদত। দোয়ার মাধ্যমে মহান প্রভুর ইবাদত করা হয়। হজরত নুমান ইবনে বশীর (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই হলো ইবাদত।’ (তিরমিজি, আবওয়াবু তাফসিরুল কোরআন)। দোয়া শুধু ইবাদতই নয়, বরং দোয়া হলো সব ইবাদতের সার ও মজ্জা। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘দোয়া ইবাদতের সার।’ (আবু দাউদ, আস মুনান, কিতাবুস সালাত)
আমরা কীভাবে দোয়া করব, তার অনেক নিয়ম রয়েছে। তার মধ্যে উত্তম একটি নিয়ম হলো, কেবলার দিক হয়ে দোয়া করা। কেবলার দিক হয়ে দোয়া করতেই হবে এভাবে নির্দিষ্ট করা যাবে না। প্রিয়নবী (সা.) যুদ্ধের সময় কেবলার দিক হয়ে দোয়া করতেন। হজরত ওমর ইবনে খত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) কেবলার দিকে মুখ করে দুই হাত উঠিয়ে উচ্চ আওয়াজ দিয়ে আপন প্রভুর কাছে এই দোয়া করতেন- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছেন, তা পূরণ করুন। হে আল্লাহ! মুসলমানদের এ দল যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে আপনার ইবাদত করা হবে না।’ (মুসলিম আস সহিহ কিবাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়াম)
দোয়া করার সময় অবশ্যই দুই হাত উত্তোলন করে আল্লাহতায়ালার দরবারে আশা, ভয়, নম্রতা ও মিনতির সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। হজরত আবু মুসা আশারী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুল (সা.) দোয়ার জন্য হাত উত্তোলন করেছেন এমনকি আমি রসুল (সা.)-এর বগল মোবারক দেখতে পেয়েছি।’ (বুখারি, কিতাবুত দাওয়াত)। দোয়া করার সময় যে শব্দ ব্যবহার করা হয়, সে শব্দ যদি দুবার অথবা তিনবার পুনরাবৃত্তি করা হয়, তাহলে এর দ্বারা আহাজারি প্রকাশ পায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসুল (সা.) তিনবার দোয়া এবং তিনবার ইস্তিগফার করা পছন্দ করতেন।’ (আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত)। আমাদের দোয়া মহান আল্লাহ যে কোনো সময় কবুল করেন। তাছাড়া দোয়া কবুলের কিছু সময় রয়েছে। সেগুলো হলো, রমজান মাসে, সাহরির সময়, আজান ও একামতের মাঝের সময়, আরাফার ময়দানে, জুমার দিনে ও রাতে, দুই ঈদের দিনে ও রাতে, শবেবরাত ও শবেকদরের রাতে এবং সিজদা অবস্থায়।
লেখক : ইসলামী গবেষক