জাতীয়

দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি

  • রতন বালো
  • প্রকাশিত ১২ মার্চ, ২০২২

সারাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দুর্যোগের সামগ্রিক প্রস্তুতি কর্মসূচির পরিকল্পনা অনুসরণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অকাঠামোগত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এসব কাজের মধ্যে গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মি. দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু/কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় গত ২০১৯ সালে ৭ হাজার ১২৯টি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬ হাজার ২৮৯টি ব্রিজের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৮৪০ ব্রিজ চলতি বছরেই বাস্তবায়ন করা হবে।

গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসই করার লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৮৮ দশমিক ৭৮ কিমি রাস্তা টেকসইকরণ কাজের মধ্যে ২ লাখ ৭১ হাজার ৭১২ কিমি রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬৪টি মুজিব বিপ্লার নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এর মধ্যে ৫টির কাজ সম্পন্ন এবং ৫১টি মুজিবকিল্লার নির্মাণকাজ চলছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের বর্তমান সময় পর্যন্ত ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩০টির কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২২০টির মধ্যে ২১৮টির কাজ সমাপ্ত এবং বাকি ২টির কাজ প্রায় শেষ বলে জানা গেছে। এছাড়াও গত ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ৪০টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ অব্যাহত আছে বলেও জানা গেছে।

গত ১০ মার্চ জাতীয় দুর্ভোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২ উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, এমপির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কে সামনে রেখে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে বন্যা, খরা, পরিবেশ বিপর্যয়, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস ও সহনশীলতার লক্ষ্যে দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বৃদ্ধি পাবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। তিনি আরো জানান, দুর্যোগে বিপদ সংকেত প্রচার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিবিজ্ঞান প্রস্তুতিতে দ্রুত সাড়াদান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিয়ে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম (অব.) এমপি জানান, জাতিসংঘ আয়োজিত গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫-২০৩০ এর দুর্যোগ সম্পর্কিত ধারণাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই এ বছরের জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস এর প্রতিপাদ্য মুজিববর্ষের সফলতা, দুর্যোগ প্রস্তুতিতে গতিশীলতা’ নির্বাচন যথার্থ এবং সময়োপযোগী বলে তিনি মনে করেন।

এ বি তাজুল ইসলাম আরো জানান, সুদূর অতীত থেকেই বাংলাদেশ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আসছে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ করে বর্তমানে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা সফলতার সাথে করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) গঠন করেন। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে জানমাল রক্ষার জন্য দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে ২১৮টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার মানুষের জীবন এবং সম্পদ রক্ষায় সারাদেশে ১৬৪টি মুজিবকিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫টির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসই করার জন্য হেরিং বোন বন্ড প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৫৮৮ দশমিক ৭৮ কিমি রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে বলে তাজুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, উন্নয়ন যদি টেকসই না হয় তবে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই আমাদের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ইতোমধ্যে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছি। দুর্যোগে বিপদ সংকেত পদ্ধতি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিহ্রাস, প্রস্তুতি, দ্রুত সাড়াদান, ক্ষয়ক্ষতি নির্বাপণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন ইত্যাদি কার্যক্রমে বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, উপকূলীয় জেলাসমূহের সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্য থেকে ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক গঠন করার পাশাপাশি ৬২ হাজার প্রশিক্ষিত নগর স্বেচ্ছাসেবক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ১০৯০ নম্বরে (টোল ফ্রি) ওঠজ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ভূমিধস, বজ্রপাত, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি দুর্যোগ আমরা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করেছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সুদীর্ঘ অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানান তাজুল ইসলাম।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার পূর্বপ্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে আসছে বলে সচিব জানান।

তিনি জানান, বন্যার পূর্বাভাস ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ভূমিধস ও হাওরের বন্যা মোকাবিলায় যুগোপযোগী সরঞ্জাম ক্রয়, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বহুমুখী প্রবেশগম্য উদ্ধারকারী নৌযানসহ আধুনিক উদ্ধার যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সফলতার সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে বলে মো. কামরুল হাসান জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads