১৫ নভেম্বর ভয়াল সিডরের ১২তম বার্ষিকী। স্মরণাতীত কালের মধ্যে সবচেয়ে স্বল্পক্ষণ স্থায়ী অথচ সবচেয়ে ভয়ংকর, শক্তিশালী ও প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক দুর্যোগ ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বরের ‘সিডর’ নামীয় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হারিকেনের তীব্র ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি দেখতে অনেকটা মানুষের চোখের মতো হওয়ায় সিংহলী ভাষায় এর নামকরণ করা হয় ‘সিডর’। ভয়াবহ সেদিনের ১১ বছর অতিবাহিত হলেও আজো সেই দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলের মানুষদের।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হালকা বৃষ্টি। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যায় হালকা বাতাস। রাত ৯টা থেকে আমতলীসহ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় প্রচণ্ড বেগে ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে। সাগর ফুঁসে ওঠে। রাত সাড়ে ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি বলেশ্বর নদী অতিক্রম করে বরগুনা জেলার উপর দিয়ে দেশের স্থল সীমায় প্রবেশ করে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ছিল পাথরঘাটায়। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ থেকে ২৪০ কিলোমিটার। রাত ১০টায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব শুরু হয়। এ সময় ফুঁসে ওঠা সাগরের পানি ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমতলীসহ উপকূলের সমগ্র এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নিহত হয় ২৯৭ জন, নিখোঁজ ৪৯ জন ও আহত ২ হাজার ৫০০ জন। আমতলী ফেরিঘাটের পন্টুন, নোঙর করা ২টি ফেরি তিতকাটা চরে, লঞ্চঘাটের পন্টুন পার্শ্ববর্তী ওয়াপদার বাইরের চরে উঠে যায়। নদী ও সমুদ্রে ডুবে যায় ৩৩৮টি ট্রলার। এই সিডরের আঘাতে শুধু আমতলীই নয়, উপকূলীয় ১৫টি জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিডর চলে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় দেড় মাস। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল এক মাস। দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থারাও যোগাযোগ না থাকার কারণে সঠিক সময় ত্রাণসহ সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেনি। দীর্ঘ এগারো বছর অতিবাহিত হলেও অনেকে হারানো স্বজনদের এখনো ফিরে পায়নি। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। প্রতিবছর উপকূলের মানুষ এ দিনটিকে সিডর দিবস হিসেবে পালন করে।