মুক্তমত

দক্ষ যুব সম্প্রদায় দেশের সম্পদ

  • প্রকাশিত ২৬ জুন, ২০২১

মো. ইমরান

সমৃদ্ধ দেশ গঠনে যুবসম্প্রদায়কে কাজে লাগাতে হবে। এদের অধিকাংশই গ্রামীণ পর্যায়ে খেটে খাওয়া মনুষ। এদের তালিকায় শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সবাই আছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হচ্ছে, কোনো যুবককে বেকার অবস্থায় দেখলে সবার আগেই মনে হয়, হয়তো ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য নেই কিংবা মামা-খালু নেই বলেই বেকার। তবে এই বেকার যুবকদের আমরা কতটা দক্ষ করে তুলতে পেরেছি? দক্ষতা অর্জনের লড়াইয়ে শহুরে যুবকদের থেকে গ্রামীণ যুবকরা অনেকটা পিছিয়ে। আর দক্ষতার লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে তারা পায় না সঠিক কর্মের সন্ধান। ফলে বেকারত্বের লাইন হয় আরো দীর্ঘ। এই জন্য গ্রামীণ যুবকদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আউটসোর্সিং শব্দটা প্রচলিত থাকলেও এর ন্যূনতম ধারণা নেই বললেই চলে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব। প্রশিক্ষণের অভাবে এসব থেকে তারা অনেক দূরে। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে নেটওয়ার্ক সিস্টেম নিয়ে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত নেটওয়ার্কের অভাবে এসব হয়ে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত। কম্পিউটার রীতিমতো গ্রামে একটা আলোড়ন। এটির সাথে সবাই পরিচিত থাকলেও বন্ধ, চালু করাটাই কঠিন তাদের জন্য। বিভিন্ন লোকাল পর্যায়ে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও নামমাত্র অল্প কিছু বিষয় শিখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এতে করে যুবকরা কম্পিউটার সম্পর্কে খুব স্বল্প ধারণা নিতে পারে, যা কার্যত বিভিন্ন কর্মস্থলের জন্য অনুপযোগী। আবার প্রায় অধিকাংশ যুবকেরই স্বপ্ন থাকে উদ্যোক্তা হওয়ার। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যুবকদের এজন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোক্তা হতে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে দরকার মোটা অঙ্কের মূলধন। এককালীন মূলধনের অভাবে অনেক গ্রামীণ যুবকদের উদ্যোক্তা হাওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।

আমাদের জাতীয় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে অশিক্ষা কিংবা স্বল্প শিক্ষিতদের নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। গ্রামের অনেক যুবক কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। সেই অগ্রযাত্রায় তাদের ভূমিকাও নেহাত কম নয়। অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, অনেক সময় শোনা যায় যথেষ্ট কর্মদক্ষতার অভাবে বিভিন্ন কাজ থেকে অনেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এতে করে তার পরিবার যেমন বিপাকে পরে তেমনি দেশও।

দেশের অর্থনীতির চাচা সচল রাখাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি দেশের খাদ্যের বাজারে খাদ্য সরবরাহ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে চাল, ডাল, পিঁয়াজ, তরকারি ফলে বলেই পুরো দেশের খাবার বাজার জমজমাট থাকে। যুবক কৃষকরা একটি জমিতে বছরে একবার ফসল ফলানোর পর ওই জমিতে বছরের বাকি সময় অনাবাদি করে রাখে। যদি পুরো বছরে ওই জমিতে আবাদ প্রক্রিয়া চালু থাকে খুব কম সংখ্যক জায়গা থেকে অনেক সফল উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। উপরিউক্ত সমস্যাসহ আরো অনেক সমস্যার কারণে গ্রামের যুব সম্প্রদায় অনেকটা পিছিয়ে আছে।

এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সবদিক বিবেচনা করে আগাতে হবে। যদি এই যুব সম্প্রদায়কে আউটসোর্সিংয়ের ব্যাপারে মানসম্মত ও উপযুক্ত ধারণা দেওয়া যায়, তবে অনেকেই কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিটি থানা পর্যায়ে যদি দক্ষ প্রশিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠান খোলা যায়, তবে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে। একইসঙ্গে নেটওয়ার্ক সমস্যা দূরীকরণে বিটিআরসি’র সাথে কথা বলে যদি সমস্যা দূর করা যায়, সেটি হবে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। তখন কম্পিউটার শিক্ষা এর সদ্ব্যবহারে গ্রামীন যুবকরাই হয়ে উঠতে পারে উদ্যোক্তা। কম্পিউটার শিক্ষার জন্য দেশের আনাচে কানাচে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেখানে সাধারণ কিছু বিষয় শেখানো হয়। কিন্তু যদি যুগোপযোগী বিষয়গুলোকে সামনে এনে দক্ষ যুব সম্প্রদায় গড়ে তোলা হয়, তবে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবকরাই কর্ম-উদ্যোগে এগিয়ে যাবে।

এই উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজন অবশ্য মূলধন। এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক যদি বিনা সুদে, স্বল্প সুদে ও সরল সুদে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে অনেকে যুবকই উদ্যোক্তা হয়ে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অন্য্যান্য পিছিয়ে পড়া যুবকদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারবে। পাশাপাশি প্রবাসী যুবকরা লাঞ্ছনার শিকার হয় যথেষ্ট কর্মদক্ষতার অভাবে। সুতরায় একই সঙ্গে বিদেশ যাওয়ায় পূর্বে নির্দিষ্ট কাজের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান জরুরি। সেক্ষেত্রে গ্রামীণ যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান করে দিতে পারলে, তারাই বিদেশগামী যুবকদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবে। এই দক্ষ প্রবাসী শ্রমিকরাই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে।

পরিশেষে এ কথাই বলব, একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে তার যুব সম্প্রদায়ের দক্ষতার ওপর। তাই পিছিয়ে থাকা যুবকদের যদি যথাযথভাবে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী করা যায়, তবেই দেশের উন্নয়নের চাকা আরো সচল হবে।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads